নয়াদিল্লি – টাকার দরে রেকর্ড পতন। যা দেখে ভারতের উঠতি অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ভারতীয় মুদ্রা বা রূপি যার চলতি নাম হল টাকা, লাগাতার কমজোর হচ্ছে। অর্থাৎ ডলারের তুলনায় ক্ষমতা হারাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় টাকার মূল্য কম হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের কপালে।
সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার বাজার বন্ধের পর টাকার মূল্য কমে দাঁড়িয়েছিল ৮৪.১১। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এক ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৮৪.১২২৫ টাকা। যা এ যাবৎ সর্বনিম্ন বলে মনে করা হচ্ছে। বাজার খোলার পর পরই টাকার দাম আরও পড়তির দিকে যেতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। সেই সম্ভাবনাই সত্যি হয়ে দাঁড়ায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই।
কেন এই পতন?
মূলত বিশ্ব বাজারের লাগাতার চলতে থাকা অস্থিরতার কারণেই টাকার দর কমেছে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। রাশিয়া বনাম-ইউক্রেন কিংবা ইজরায়েল-মিশরের যুদ্ধ চলতে থাকলে আগামীদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
দ্বিতীয়ত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সেটিও টাকার দরে পতনের জন্য দায়ী বলে মনে করছেন অনেকেই। আজ মঙ্গলবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ট্রাম্প কিংবা কমলা যিনিই জিতবেন, তাঁর সরকারের আর্থিক নীতির ওপরেই বিশ্ববাজারে ডলারের দাম নির্ভর করবে। এবং ডলারের দামের ওপরেই নির্ভর করবে ভারতের মতো দেশের মুদ্রার হাল হকিকত।
টাকার দাম কমে যাওয়ার পিছনে অনেকে আবার তৃতীয় কারণ হিসেবে ভারতীয় শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি পুঁজি বেরিয়ে যাওয়াকেও দায়ী করছেন। বিশেষজ্ঞদের কথায়, বিদেশি লগ্নিকারীরা ক্রমাগত ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করে ডলার কিনে চলেছেন। প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বিদেশি লগ্নিকারীরা ডলার কিনতে শুরু করায় আমেরিকান মুদ্রাটির চাহিদা বেড়েছে। যা একে দামি করে তুলছে। আর ডলারের দামের সূচক চড়তে থাকায় বিশ্ব জুড়েই অন্যান্য মুদ্রার দর নিম্নমুখী হয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিপুল অর্থ তুলে নেওয়ার জেরে টাকা কমজোরি হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। অবিলম্বে পরিস্থিতির বদল না হলে তা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
টাকার দাম কমে যাওয়ার পিছনে চিনের হাত
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা তো ছিলই। তার উপরে চিনের বাজারের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া বিদেশি লগ্নিকারীদের সে দেশে টেনে নিয়ে গিয়েছে। কেননা, কিছুদিন আগেই চিনের অর্থনীতি বাঁচাতে শি জিনপিংয়ের সরকার বিদেশী লগ্নিকারীদের জন্য বেশকিছু লোভনীয় ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছে। যে কারণে লগ্নিকারীদের অনেকেই ফের ভারত ছেড়ে চিনের শেয়ারমার্কেটের দিকে ঝুঁকেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তাছাড়া, মঙ্গলবার আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ভোট, রয়েছে সেখানে সুদ বৃদ্ধির ইঙ্গিতও। তাই বিদেশি পুঁজি ভারত ছাড়ার হিড়িকে দ্রুত বদলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
টাকার দাম কমলে আপনার কি অসুবিধা
টাকার দাম কমে যাওয়া মানেই বিদেশ থেকে আমদানি করা জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া। স্বাভাবিক ভাবেই লাগাতার এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে জিনিসের দাম বাড়বে। বাজারে জিনিসের দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফিতি হবে। মুদ্রাস্ফিতি হলে আপনার-আমার সংসার চালাতে আরও নাভিশ্বাস উঠবে।
কারও সর্বনাশ তো আবার কারও পৌষমাস
তবে যাঁরা ডলারে বেতন পান, কিংবা ডলার রোজগার করেন তাঁদের জন্য এটা সুখবর। কেননা, ডলারের বিনিময়ে টাকা নিতে গেলে বাড়তি কিছু পাওয়া যাবে। মূলত যাঁরা বিদেশে কাজ করে দেশে টাকা পাঠান তাঁদের বেতন ভারতীয় টাকায় বাড়বে।