Saturday, November 9, 2024
Saturday, November 9, 2024
Homeবৈঠক'Pappu' Rahul Gandhi: গোঁফ-দাড়ি বাড়িয়ে রাহুল গান্ধীর ‘পাপ্পুত্ব’ কি ঘুচল

‘Pappu’ Rahul Gandhi: গোঁফ-দাড়ি বাড়িয়ে রাহুল গান্ধীর ‘পাপ্পুত্ব’ কি ঘুচল

- Advertisement -

অরণ্য রায়

‘‘গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়েই যায় চেনা।’’ সুকুমার রায়ের ‘গোঁফ চুরি’ রাহুল গান্ধী (‘Pappu’ Rahul Gandhi) যে ছোটবেলায় পড়েন নি – সেটা হলফ করেই বলা যায়। তবে বড় হয়ে তিনি এই ক’টি লাইন কোনও বাঙালি সাংসদ কিংবা কংগ্রেস নেতার কাছে শুনে থাকলেও থাকতে পারেন।

তবে গোঁফের পাশাপাশি তিনি দাড়িটিও দিব্য বাড়িয়েছেন। গোঁফ-দাড়ি মিলিয়ে রাহুল গান্ধীকে এখন ‘পাপ্পু’ বলায় দায়। ‘পাপ্পুত্ব’ (‘Pappu’) ঘোচাতেই তিনি তাঁর গোঁফ-দাড়ি বাড়িয়েছেন কি না – সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার বিজেপির নেতারা এটাও বলতে পারেন, মোদীজীকে দাড়ি বাড়াতে দেখে রাহুল গান্ধীও ‘নকল’ করেছেন। কাকে দেখে কে গোঁফ-দাড়ি বাড়িয়েছেন – সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমরা যেটা আলোচনা করতে চাইছি, রাহুল গান্ধী (‘Pappu’ Rahul Gandhi) কি সত্যিই এবার পরিণত রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা পালন করতে চলেছেন? ২০২৪-এ তিনি কি সত্যিই প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীকে টেক্কা দিতে পারবেন?

কিছুদিন আগেই রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) তাঁর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা ‘সফল ভাবে’ শেষ করেছেন। তারপরই তাঁকে লোকসভার বাজেট অধিবেশনে অংশ নিতে দেখা গেছে। এরপরই তিনি ছুটে গেছেন কাশ্মীরে। না, কোনও রাজনৈতিক কারণে নয়। ছুটি কাটাতে। শীতের শেষ সময়টা গুলমার্গের বরফে স্কেটিং করতে দেখা গেছে রাহুল গান্ধীকে। এবং শেষ পর্যন্ত লন্ডনে গিয়ে তাঁর ‘ভারত জোড়ো’র অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন রাহুল গান্ধী। আর সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়েই রাহুল গান্ধী বলেছেন, ভারতের গণতন্ত্র রীতিমতো বিপদে। বরং প্রতিবেশী চিনে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। সেখানে সোশাল জাস্টিস হচ্ছে। কিন্তু ভারতে মোদী সরকার সব শেষ করে দিচ্ছে।

মজার কথা হল, রাহুল গান্ধীর লন্ডনে গিয়ে এমন মন্তব্যের পরই মোদী বিরোধী ৯ নেতা-নেত্রী প্রধানমন্ত্রী মোদীকেই চিঠি লিখলেন এই অভিযোগ করে যে, ইডি–সিবিআই এবং আয়কর দফতরকে ব্যবহার করে বিরোধীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। আর সেটাও অপব্যবহার করে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবং এই ৯ বিরোধী নেতা-নেত্রীদের মধ্যে অবশ্যই রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রয়েছেন, ভারত রাষ্ট্র সমিতি প্রধান চন্দ্রশেখর রাও, জম্মু এবং কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লা, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রধান শরদ পাওয়ার, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। প্রত্যেকের একই অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে এমনভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে তাঁদের ভাবমূর্তি এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

কিন্তু একবার এই নেতাদের বুদ্ধির দৌঁড়টা দেখুন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মোদীর কাছেই চিঠি! চিঠিটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠালে ভালো হতো না? কিংবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে? কিন্তু না, এই নেতারা মোদীর বিরুদ্ধে চিঠিটা পাঠিয়েছেন মোদীর কাছেই। ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের এই যদি বুদ্ধির দৌঁড় হয়, তাহলে বলতেই হয় রাহুল গান্ধী এখন ভারতের রাজনীতিতে পোড় খাওয়া নেতা হয়ে গিয়েছেন। তা না হলে তিনি লন্ডনে মোদীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা কেন সুড়সুড় করে মোদীর বিরুদ্ধে মোদীকেই চিঠি দিতে যাবেন?

অর্থাৎ ধরে নেওয়া যেতেই পারে, রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় ভারতের রাজনীতিকে একেবারে গুলে খেয়েছেন। আর সেই কারণে তাঁর দাড়ি-গোঁফও গজিয়েছে। এবং ‘পাপ্পুত্ব দশা’ ঘুচেছে। যদিও বিজেপির নেতারা রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে বলছেন, আসলে ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধী তাঁর দাড়ি-গোঁফ গজানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন নি। আর সেই কারণেই তিনি আগের মতোই ভারতে সাংবাদিক বৈঠক না করে লন্ডনে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছেন।

ইঙ্গিত স্পষ্ট। এখন লন্ডনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বিবিসি গোধরা নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়ে মোদী সরকারের কোপে পড়েছে। বিবিসির মুম্বই এবং দিল্লির অফিসে আয়কর আধিকারিকরা হানা দিয়েছেন। এ নিয়ে জি-২০‘র বৈঠকে এসে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী। কিন্তু ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সোজা ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘‘নিজের চরখায় তেল দিন। ভারতে থাকতে গেলে ভারতের আইন মানতে হবে।’’ এরপর ব্রিটিশ সরকার ট্যা-ফু করেনি বটে, কিন্তু আমাদের রাহুল গান্ধী লন্ডনে গিয়ে বাকি কাজটা করে দিয়েছেন। বিদেশি সাংবাদিকদের ডেকে মন ভরে মোদী সরকারের নিন্দা করেছেন।

এরপরেও কেউ কি বলবেন, রাহুল গান্ধীর ‘পাপ্পুত্ব’ ঘোচে নি? তবে রাহুল গান্ধীর ‘পাপ্পুত্ব’ ঘুচলে সবথেকে বড় সমস্যায় পড়বেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেননা, সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার সখ্যতা থাকলেও রাহুলের সঙ্গে তেমন একটা নেই। এদিকে আবার গোয়া বিধানসভা ভোটের পর থেকেই কংগ্রেস আর তৃণমূলের মধ্যে গোঁসা চলছে। সেই গোঁসা আরও বেড়েছে মেঘালয়ে কংগ্রেসের খারাপ ফলে। মেঘালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল তৈরি তো করেইছেন, এবারের বিধানসভায় ভোট কাটাকুটির খেলায় অন্তত কংগ্রেসের ৪টি আসন বিজেপি জোটের হাতে তুলে দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী বিরোধী জোটে কংগ্রেসীদের সঙ্গে চিঠি লিখেছেন ঠিকই, কিন্তু রাহুল গান্ধী সেটাকে কতটা ভালো চোখে নেবেন – সে নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই।  

(প্রবন্ধের বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব)

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর