নয়াদিল্লি – আরও একবার সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল আরজি কর মামলার শুনানি। মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তার পরিবর্তে বুধবার সকালে মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, বুধবার শুনানির তালিকায় এই মামলাটিই প্রথমেই থাকবে।
কথা ছিল মঙ্গলবার তিনটের সময় শুরু হবে আর জি কর মামলার শুনানি। সেই মতো প্রস্তুত ছিল সব পক্ষ। যদিও একেবারে শেষ মুহূর্তে জানা যায়, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। বিশেষ কারণে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ফলে চন্দ্রচূড়ের অনুপস্থিতির জন্য আজ শুনানি হবে না। আগামিকাল মামলার শুনানির তালিকায় আর জি কর মামলাকে দিনের প্রথম মামলা হিসেবে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সেক্ষেত্রে সকাল সাড়ে দশটায় শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই কাণ্ডে দু’টি বিষয়ে মামলা চলছে। একটি হল, মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের মামলা। অন্যটি, আর্থিক দুর্নীতির মামলা। এই দু’টিরই তদন্ত করছে সিবিআই। মঙ্গলবার ওই দু’টি বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।
সিবিআইয়ের পাশাপাশি হলফনামা জমা দেওয়ার কথা ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও। হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগকে ‘রাজনৈতিক স্বজনপোষণের সুন্দর পন্থা’ আখ্যা দিয়ে আগের শুনানিতে ছ’টি প্রশ্ন তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। সেই প্রশ্নগুলির জবাব মঙ্গলবার হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যের।
আগের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, হাসপাতালে রোগীকল্যাণ সমিতি পুনর্গঠন করছে তারা। সেই সঙ্গে হাসপাতালের কাজকর্মে আরও স্বচ্ছতা আনতে ‘সার্বিক হাসপাতাল পরিচালন ব্যবস্থা’ (ইন্টিগ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছিল। সেই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে— অনলাইনে ওপিডি টিকিট বুকিং, ই-প্রেসক্রিপশন, অনলাইন রেফারেল সিস্টেম। সেই প্রক্রিয়া কত দূর এগোল, তা-ও মঙ্গলবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে জানানোর কথা ছিল রাজ্য সরকারের।
১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করবেন চন্দ্রচূড়। আগামী ৯ এবং ১০ তারিখ যথাক্রমে শনি ও রবিবার হওয়ায় শুক্রবারই শেষ বার তাঁর বেঞ্চ বসবে। সেই ভাবে দেখলে, বুধবারই শেষ বার আরজি কর মামলা শুনতে চলেছেন প্রধান বিচারপতি, যদি না বৃহস্পতি বা শুক্রবারও মামলা শুনতে চান তিনি। উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রধান বিচারপতিই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা গ্রহণ করেছিলেন। বুধবার সেই মামলা শুনতে চলেছে তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
এর আগে ১৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে ছিল আর জি কর মামলার শুনানি। সেখানে চিকিৎসকদের তরফে অভিযোগ করা হয়, ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালের নিরাপত্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করছে রাজ্য সরকার। এদিকে আর জি কর মামলায় যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই সঞ্জয়ও একজন সিভিক। এই প্রেক্ষিতে মামলায় শেষ শুনানিতে সিভিক নিয়োগ, কর্মপদ্ধতি, বেতন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। পাশাপাশি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল ও স্কুলের মতো জায়গায় সিভিক নিয়োগ করা যাবে না। আদালতের নির্দেশ মতো মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দেয় রাজ্য সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেল এই মামলা।