অভিজিৎ দাস
এতদিন সবাই জানত পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় এসে আমাদের জানতে হল, বাঘ শুধু পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে নেই, সন্দেশখালিতেও রয়েছে। যদিও সেই বাঘ শোনা যাচ্ছে সিবিআইয়ের লাঠির গুঁতো খেতেই আসল রূপে চলে এসেছে। বাঘ যে আসলে বেড়াল সেটা বোঝা গেছে। বেড়াল এখন সিবিআইয়ের পাল্লায় পড়ে মেউ মেউ করে কথা বলছে আর ভেউ ভেউ করে কাঁদছে। বাঘ এখন ভেজা বেড়ালে পরিণত হয়েছে। মানে সন্দেশখালির বেড়াল মমতা পুলিশের আন্ডারে থেকে যে আঙুলটা উঁচিয়ে ধরেছিল, সেই আঙুল এখন সিবিআই তার পিছনেই চালান করে দিয়েছে।
তবে আঙুলের কথা যখন উঠল তখন বলি, খোদ তৃণমূল নেত্রী নিজেও কিন্তু আঙুর থুরি আঙুল খুব ভালোবাসেন। কথায় কথায় দুর্নীতির দায় এড়াতে তিনি আঙুলের কথা বলেন। প্রতি মাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আশায় বসে থাকা বাঙালিকে মনে করিয়ে দেন, হাতের পাঁচ আঙুল না-কি সমান নয়। আরে ম্যাডাম লোকে এটা জানত না যে সন্দেশখালিতেও তৃণমূল বেড়ালকে বাঘ বানিয়ে পুষছে। কিন্তু হাতের পাঁচ আঙুল যে সমান নয় – এটা সবাই জানে। কারণ বাঙালি আর কিছু করুক বা না করুক লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় খাওয়া আর ধোয়ার সময় ঠিক নিজের হাতটা দেখে। সুতরাং হাতের পাঁচ আঙুল যে সমান নয় এটা বাঙালিকে না মনে করালেও চলবে।
কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর যে কি হয়েছে, হাতের পাঁচ আঙুলের উদাহরণ দেওয়া ছাড়া দুর্নীতির কথা ঢাকতে আর অন্য কোনও উদাহরণই দিতে পারছেন না। ন্যাংটা হয়ে গেলে দুই হাতে লজ্জা ঢাকা যায় জানতাম, কিন্তু আপনি তো বাঙালিকে আঙুল দিয়ে দুর্নীতি ঢাকার কথা বলছেন। সেটা কি সম্ভব হবে? তাছাড়া, যেভাবে একের পর এক তৃণমূল নেতা দুর্নীতি আর অত্যাচারের দায়ে জেলের ভিতরে যাচ্ছে তাতে হাতের পাঁচ আঙুলও কম পড়ে যাচ্ছে। আঙুল দিয়ে যদি দুর্নীতি ঢাকতেই হয় তাহলে বরং বলুন হাতের আঙুলগুলোই পচে গেছে।
কিন্তু ওই কথাটা তিনি বলবেন না। কেন বলবেন না? কারণ আঙুলের পিছনেই তো আসল হাতটা রয়েছে। তৃণমূলের ভোটচিহ্ন ঘাসফুল হতে পারে। কিন্তু নেত্রী যেহেতু কংগ্রেস থেকে এসেছেন সুতরাং তিনি ভালোমতই জানেন হাতকে কোথায় কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু দুখের বিষয় আমাদের নেত্রী ১৩ বছরের সরকার চালাতে গিয়ে হাত আর মুখ দুটোই পুড়িয়ে ফেলেছেন। সেটা যাঁরা বোঝার ঠিকই বুঝেছেন। নেত্রীর মনে রাখা উচিত, বাংলার পাবলিক লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা খায় ঠিকই কিন্তু যতই ঘাসফুলের লোভ দেখান, ঘাসে কিন্তু মুখ দিয়ে চলে না। সুতরাং হাতের পাঁচটি আঙুল সমান নয় বলে পাবলিককে আর বোকা বানাবেন না।
আরও একটা কথা না বললেই নয়, যখনই বড় কোনও নেতা-মন্ত্রী ইডি কিংবা সিবিআইয়ের জালে উঠছে, নেত্রী বলছেন – তাঁর কাছে না কি খবর ছিল না। নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছে, নেত্রী কিছুই জানেন না। বীরভূমের মাটিতে কেষ্ট বছরের পর বছর কয়লা খাদানে গিয়ে গরু চড়িয়েছে – নেত্রী জানেন না। শিক্ষা দফতরের মানিক বছরের পর বছর যোগ্যদের চাকরির তালিকা থেকে বাতিল করে দিয়ে মাল কামিয়েছে নেত্রী জানেন না। প্রিয় বালু বছরের পর বছর রেশনের মালে ভূষি মিশিয়েছে – নেত্রী জানেন না। সন্দেশখালির শাজাহান বছরের পর বছর এলাকায় আতঙ্ক আর মেয়েদের তুলেছে – নেত্রী জানেন না। কিছুই যদি জানেন না তাহলে পার্টির নেত্রী হয়ে বসে আছেন কি করতে? কিছুই জানেন না, অথচ ভোটের সময় তো বেশ বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি আসনে না কি আপনিই প্রার্থী। এখন বলছেন আপনি কিছুই জানেন না। লোকে বিশ্বাস করবে?
বলতে গেলে অনেক কথায় বলা হয়ে যাবে। আবার বেশি কথা বলতে গেলে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। কিন্তু তারপরেও না বলে থাকতে পারছি না যে সন্দেশখালির শাজাহান বাঘ না বেড়াল সেটা যদি আপনি না জেনে থাকেন তাহলে রাজ্যবাসীর ট্যাক্সের টাকায় হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট করে সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন কেন? কিসের স্বার্থে? কি লুকোতে? এখন হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট সব জায়গায় রাজ্যের মানুষের টাকা ওড়ানোর পর বলছেন – আপনি কিছুই জানতেন না? হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়। লোক যাতে এই উদাহরণ বিশ্বাস করে তারজন্য আগেভাগেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ১০০০ টাকার টোপ দিয়ে বসে আছেন। জেলায় জেলায় গিয়ে সভা করে মানুষের হাতে একের পর এক উপহার তুলে দিচ্ছেন। সেই দেখে লোকে হাততালি দিচ্ছে। ভাবছে, এরপরের উপহার পাওয়ার তালিকায় তার নামটা আসবে। কিন্তু পাবলিককে উপহার দিতে গিয়ে যে পাবলিকের পকেট কেটে কেটে ফাঁকা করে দিয়েছেন – সেটা পাবলিক কিন্তু বুঝতে শুরু করেছে। সুতরাং হাতের পাঁচ আঙুল না দেখিয়ে বরং কাজের কাজ করুন। এখনও হয়তো বিরোধী দল হওয়ার সময় আছে। তা নাহলে এরপর বিরোধী দলনেত্রীও হতে পারবেন না। আর সেটা হলে সিপিএম কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে বদলা আর বদল দুটোই নিয়ে ফেলবে।
(প্রবন্ধের বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব)