মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
Homeবৈঠকউত্তরপ্রদেশ নিয়ে যতই গালাগালি দেন না কেন, যোগীকে নকল করেই কুর্সি বাঁচাতে...

উত্তরপ্রদেশ নিয়ে যতই গালাগালি দেন না কেন, যোগীকে নকল করেই কুর্সি বাঁচাতে চান মমতা

- Advertisement -

তথাগত সিংহ

রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য কী না করতে হয়! ঝুরি ঝুরি প্রতিশ্রুতি থেকে শুরু করে সোনার বাংলা – কী না শোনা গিয়েছে নেতা-নেত্রীদের মুখে! কিন্তু এরপরেও যদি কাজ না হয়? তাহলে অন্যপথ তো ধরতেই হয়। যেমনটা ধরেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা ইদানিং বেশ বুঝতে পেরেছেন শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলার কুর্সি আর দখলে রাখা যাবে না। সংখ্যালঘুদের তোশামোদের ফর্মুলাও লোকে বুঝে গিয়েছে। সুতরাং এখন তিনি এমন একটি ভোট রণকৌশল নেওয়া শুরু করেছেন যা বাংলার মানুষের জন্য নতুন হতে পারে।

তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই রণকৌশল বাংলার মানুষের কাছে নতুন হলেও আসলে সেটা নকল। আর এই নকলটা মমতা করছেন বিজেপিকে দেখে। আরও স্পষ্ট করে যদি বলতে হয় তাহলে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে দেখে। তা সে তৃণমূলের নেতারা যতই কথায় কথায় উত্তরপ্রদেশ কিংবা গালমন্দ করুন না কেন – বাস্তব সত্যিটা হল মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ধরে রাখতে এছাড়া মমতার আর কোনও উপায়ও ছিল না।

শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কট্টর সনাতনী বনে গিয়েছেন। কপালে লম্বা লাল টিকা, গলায় গেরুয়া উত্তরীয় আর সভায় সভায় মা-বোনদের তুলসীমঞ্চে শাঁখ বাজানোর কথা বলে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাকে হিন্দুত্বর দিকে টেনে নিয়ে চলেছেন। বিজেপির হাতিয়ার ব্যবহার করে শুভেন্দু বেশ সাড়াও ফেলে দিয়েছেন।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা পড়েছেন বিপাকে। বাংলার আম পাবলিক আর ধর্ম নিরপেক্ষর বুলিতে তেমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। উলটে সর্বধর্মকে নিয়ে চলা তৃণমূলের যে ‘চুরি করাই ধর্ম’ এই বার্তাটা শুভেন্দু অধিকারীদের কারসাজিতে অতি জোরাল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা তাঁর রণকৌশল পালটে ফেলা শুরু করেছেন। এবং অবশ্যই সেটা করছেন অতি চালাকির সঙ্গে।

সংখ্যালঘুদের বছরের পর বছর তোষণ করেও যে পশ্চিমবঙ্গ এতদিন ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, তার এমন ভোলবদল শুভেন্দু করতে পারবেন – এটা তৃণমূল নেত্রীর বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। এই বাংলার বুকেও যে পতপত করে একদিন গেরুয়া পতাকা উড়তে পারে – সেটা তাঁর স্বপ্নেরও বাইরে ছিল। মমতা ভেবেছিলেন লাল পতাকা ছিঁড়ে ফেললেই ৩৫ বছরের জন্য বাংলার কুর্সি তাঁর দখলে চলে যাবে।

কিন্তু যে হবার নয়, সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। অতএব যোগীর কপি করতে শুরু করলেন তিনি। আর যাই হোক, এই মুহূর্তে তিনিই বিজেপির হিন্দুত্বের পোস্টার বয় কি না! মমতা যে যোগীকে হুবহু নকল করতে শুরু করেছেন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এক বছরে তিনটি সিদ্ধান্ত। ১। ভাগিরথীতে উত্তরপ্রদেশের গঙ্গার মতো করে সন্ধ্যা আরতি ২। দীঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দির এবং ৩। সম্প্রতি কলকাতার বাজা কদমতলা ঘাটে দেব দীপাবলি উৎসবের সূচনা।

খেয়াল করে দেখুন উত্তরপ্রদেশেও কিন্তু যোগী কিংবা বিজেপিও এই একই ফর্মুলায় এগোচ্ছে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন, কাশীবিশ্বনাথ ঘাটে সন্ধ্যা আরতিকে ঢেলে সাজানো এবং দীপাবলীতে লক্ষ লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশ্বরেকর্ড তৈরি করা। এসবের সবগুলিই কপি করে বাংলায় শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দির, সন্ধ্যা আরতি এবং দেব দীপাবলি – সবই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নতুন প্রকল্প।

কথা হচ্ছে, যোগীকে নকল করার কী প্রয়োজন পড়ল ‘জননেত্রী’, ‘সততার প্রতীক’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের? আসলে পুরনো ফর্মুলা আর কাজ করছে না। সংখ্যালঘু ভোটারদের তোষণ করেও ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। বগটুইয়ের ঘটনার পর সংখ্যালঘুরা ‘অতি হিন্দুত্ববাদী’ শুভেন্দু অধিকারীকেও ‘নেতা’ মানতে শুরু করেছেন। যার ফল সাগরদীঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের গো-হারা হওয়া।

যদিও বাইরন বিশ্বাসকে পকেটে পুরে ফেলা হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘু বগটুই এলাকার সংখ্যালঘু ভোটাররা কি তৃণমূলে ফিরেছেন? মনে হয় না। তা না হলে এভাবে ‘ধর্মনিরেক্ষ’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভায় সভায় ‘ভুলভাল’ সংস্কৃত মন্ত্রপাঠ কিংবা অযোধ্যার আদলে দীঘায় জগন্নাথ মন্দির অথবা ভাগরথীর তীরে উত্তরপ্রদেশের মতো সন্ধ্যা আরতির ব্যবস্থা করতে হত না। এতদিন মমতা একাই মঞ্চে মন্ত্রপাঠ করছিলেন। ইদানিং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সেই একই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। তাঁরাও যে হিন্দু, ব্যানার্জী ব্রাহ্মন – সেটাই কি বাংলার হিন্দু ভোটারদের মনে করিয়ে দেওয়া?

তবে ভাঙলেও মচকাচ্ছেন না তৃণমূলের নেতারা। ডজন ডজন দুর্নীতির বেলায় তাঁরা যেমন বলেন, অভিযোগ আগে প্রমাণ তো হোক! ঠিক তেমনই যোগীকে নকল করার জবাবে তাঁরা বলছেন ভোটের ভাগাভাগির রাজনীতি না কি তাঁরা করেন না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি বাঁচাতে অন্যের ভাগে ভাগ বসাতে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও কসুর করছেন না – সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

(প্রবন্ধের বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব)

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর