হাওড়া: ফের বেলাইন ট্রেন। লাইনচ্যুত শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস। হাওড়ার নলপুরের কাছে এদিন সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। সূত্রের খবর, লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেনের তিনটি কামরা। তবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। ওই লাইনে অন্যান্য সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসনও।
রেল সূত্রে খবর, শনিবার ভোর ৫টা ৩১ মিনিট নাগাদ ডাউন শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেকেন্দ্রাবাদ থেকে শালিমারের দিকে আসছিল ট্রেনটি। নলপুরের কাছে ট্রেনের গতি কম থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকেরা। যাত্রীরা সকলে সুরক্ষিত আছেন বলেই খবর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোরে প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে ট্রেনটি। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মনে করা হচ্ছে, যে লাইনে ট্রেনটির ঢোকার কথা ছিল, সেখানে না ঢুকে পাশের লাইনে চলে গিয়েছিল ইঞ্জিন। সেই কারণেই এই দুর্ঘটনা। ট্রেনটির গতি বেশি থাকলে যা আরও বড় আকার নিতে পারত।
ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন থেকে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। লাইনচ্যুত কামরাগুলি সরিয়ে কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংখ্যা আধিকারিক ওম প্রকাশ চরণ বলছেন, “ মূলত পার্সেল কোচ ও তার পাশের কয়েকটি কোচ লাইন ছেড়ে নিচে নেমে গিয়েছে। কোনওরকম হতাহতের খবর আমরা পাইনি। সমস্ত যাত্রীদের অন্য ট্রেনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।”
অন্যদিকে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইতিমধ্যেই খড়গপুর সেকশন থেকে হেল্প লাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আটকে পড়া যাত্রীদের আনার জন্য স্পেশ্যাল রিলিফ ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশিরভাগ যাত্রীকেই হাওড়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেখান থেকেই তাঁদের পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য স্টেশনেও। দেরিতে চলতে শুরু করেছে অনেক ট্রেনই। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সব স্টেশনেই বাড়ছে ভিড়। সমস্যায় মেদিনীপুর থেকে হাওড়া গ্রামে সমস্ত যাত্রীরা। সকাল থেকেই মেদিনীপুর স্টেশনে প্যাসেঞ্জারদের ভিড়। সকাল থেকেই হাওড়াগামী সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা। এখনও পর্যন্ত মেদিনীপুর স্টেশন থেকে যে সমস্ত ট্রেন হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সেই সমস্ত ট্রেন যাত্রীদের টিকিটের মূল্য নির্দিষ্ট সময়ের পর ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়ি এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায় ২৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর আরও একাধিক ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। রেলে যাত্রীসুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়েছে বার বার। গত ১১ অক্টোবরই তামিলনাড়ুর কাবারাপেত্তাইয়ে মালগাড়িতে ধাক্কা মেরেছিল একটি দূরপাল্লার ট্রেন। ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছিল। ১৭ অক্টোবর আগরতলা থেকে মুম্বইগামী লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেসের একাধিক কামরা লাইনচ্যুত হয়। উত্তরবঙ্গেও একাধিক ট্রেন বেলাইন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।