কলকাতা– ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে’র অফিসের ফাইল ডাউনলোড বিতর্কের মাঝেই বদলি করা হল ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে। ইডি সূত্রে খবর, ওই আধিকারিককে কলকাতা থেকে গুয়াহাটিতে বদলি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই গুয়াহাটির ইডি অফিসে তিনি যোগ দিয়েছেন।
বিতর্কের মাঝে হঠাৎ করে এই বদলি কেন, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, অগাস্টের শেষে যে অফিসার কলকাতা থেকে গুয়াহাটিতে যোগ দিয়েছেন, ঘটনাচক্রে ওই অফিসার লিপস অ্যান্ড বাউন্ডডসের অফিসে তল্লাশির সময় ছিলেন। সেই তল্লাশিতেই অনৈতিকভাবে ফাইল ডাউনলোড করার অভিযোগ উঠেছিল। যে মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন।
যদিও ইডি অফিসারদের দাবি, ওই ঘটনার সঙ্গে অফিসারের গুয়াহাটি যোগ দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। ওই অফিসারের ২ বছর আগে গুয়াহাটি বদলি হয়েছিল। গত এপ্রিল মাসে তাঁকে কলকাতা শাখা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি গুয়াহাটিতে যোগ দেন। তদন্তের প্রয়োজনেই আবার তাঁকে ২ মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে কলকাতা নিয়ে আসা হয়েছিল। অগস্ট মাসেই সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি গুয়াহাটি ফিরে গিয়েছেন।
তাছাড়া ইডির আরও যুক্তি, গঠনগত দিক থেকে ইডি-র কলকাতা জোনের মধ্যেই পড়ে গুয়াহাটি শাখা অফিস। তদন্তের প্রয়োজনে অফিসারদের এক অফিস থেকে অন্য অফিস পাঠানো হয়েই থাকে।
সম্প্রতিএর পরেই ওই সংস্থার কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় লালবাজারে অভিযোগ করেন, ইডি তল্লাশির সময়ে বিনা অনুমতিতে সংস্থার একটি কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেছে।
গত ২১ অগস্ট প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে থাকা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের যোগসূত্রে নিউ আলিপুরে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় প্রায় কুড়ি ঘণ্টা তল্লাশি চালায় ইডি। ইডির প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, সেখানে থেকে রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-স্টেটমেন্ট বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারী অফিসাররা। এরপরই কোম্পানির এক কর্তা অভিযোগ করেন, কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে, যেগুলি অচেনা। এই নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। ইডি-র তরফ থেকে দাবি করা হয়, এক তদন্তকারী অফিসার ওই কম্পিউটারে মেয়ের কলেজের ফর্ম ডাউনলোড করেছিলেন।
এনিয়ে পালটা ইডির বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর হয়। যা নিয়ে তদন্ত শুরু করে লালবাজার। কলকাতা পুলিশ পুরো বিষয়টি নিয়ে ইডির কাছে ব্যাখ্যা চায়। অভিযোগের জবাবে ইডি ইমেল করে জানায়, তল্লাশি চলাকালীন তাদের এক অফিসার ওই সংস্থার কম্পিউটারেই মেয়ের কলেজের হস্টেলের খোঁজ করেছিলেন। সেই কারণে কোনও ভাবে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড হয়ে গিয়েছে। তবে অনুমতিক্রমে এবং তল্লাশি সংক্রান্ত সমস্ত আইনের ধারা মেনে ওই কাজ করা হয়েছিল।
সূত্রের খবর, লালবাজারের তরফে পাল্টা মেল করে ইডির এক জন অফিসারকে সশরীরে হাজির হয়ে ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য জানানো হয়েছিল। যদিও ইডির কোনও অফিসারই সশরীরে হাজির হননি। ইডির দাবি ছিল, সমস্ত ব্যাখ্যাই মেল মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারের দু’টি হার্ডডিস্ক ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দারা চন্দনকে লালবাজারে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে ওই ঘটনায় পুলিশ এখনও কোনও মামলা দায়ের করেনি বলেই লালবাজার সূত্রের খবর।