HomeখবরRupashree Prakalpa : রূপশ্রীর ২৫ হাজার টাকার চেক হাতে পেতে মমতার মঞ্চে...

Rupashree Prakalpa : রূপশ্রীর ২৫ হাজার টাকার চেক হাতে পেতে মমতার মঞ্চে হাজির বর-বউ

- Advertisement -

কলকাতা – বৃহস্পতিবার পাঁচলার সভা থেকে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই দেখা গেল রূপশ্রীর ২৫ হাজার টাকা হাতে নিতে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে হাজির হয়ে গেলেন বর-কনে। রীতিমতো বিয়ের সাজে। তাও আবার একজোড়া নয়, দুই জোড়া। একজোড়া হিন্দু, অন্যজোড়া মুসলমান। প্রশ্ন রূপশ্রীর প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা নিয়েও নয়, প্রশ্ন উঠছে – কী এমন প্রয়োজন পড়ল যে মঞ্চের ওপর রীতিমতো বিয়ের সাজে বর-কনেকে টাকার চেক হাতে নিতে হাজির হতে হল? সরকারি প্রকল্প রূপশ্রীর টাকা নিশ্চয় সরকার বিয়ের ঠিক আগে মেয়ের হাতে তুলে দেয়। কিংবা বিয়ের পর মেয়ের নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে।

কিন্তু এদিন দেখা গেল – কনে তাঁর বরকে সঙ্গে নিয়ে রূপশ্রীর চেক হাতে নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে হাজির হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে নিশ্চয় তাঁরা বিয়ের মণ্ডপ থেকে উঠে আসেননি। কিংবা বিয়ে যখন হচ্ছে ঠিক তখনই বর-বধূকে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে রূপশ্রীর টাকার চেক নিতে ডেকে পাঠাননি। তাহলে বিয়ের সাজে বর-কনেকে মঞ্চে এসে রূপশ্রীর টাকা নিতে হল? আর যদি বর-কনেকে মঞ্চে উঠে চেক নিতেই হত, কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়াতেই হত, তাহলে সাধারণ সাজেও তো সেটা করা যেতে পারত। তাহলে কেন বর-কনের সাজ পরিয়ে দুই জোড়া বর-কনেকে সরকারি মঞ্চে তুলে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এমনই নানা প্রশ্ন কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানকে ঘিরে উঠতে শুরু করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এদিন এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আপনারা দেখলেন তো যে দুটি ছেলে-মেয়ের বিয়ে, তারা একেবারে বর-বউ সেজে এসেছে। তাদের হাতে ২৫ হাজার টাকা তুলে দিলাম। যারা রূপশ্রী, যাদের বিয়েতে অসুবিধা হয়, পারে না, এমনকী লেবার ডিপার্টমেন্টের আরও ২৫ হাজার টাকার স্কিম আছে। এই রকম সবার জন্য প্রকল্প আছে।’’

একথা সত্যি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানেই সরকারি অনুষ্ঠান করেন সেখানেই রাজ্যের নানা সামাজিক সরকারি প্রকল্পের টাকার চেক কিছু মানুষের হাতে তুলে দেন। সেই সামাজিক প্রকল্পের তালিকায় জমির পাট্টা থেকে শুরু করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সবুজশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী বিধবাভাতা -সবই থাকে। এমনকী এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তরবঙ্গে গিয়ে সরকারি অনুষ্ঠান করে গণবিবাহ দিতেও দেখা গেছে। কিন্তু তা বলে রূপশ্রীর টাকার চেক দিতে সরাসরি বর-কনে মঞ্চে ডেকে পাঠিয়েছেন, তাও আবার বিয়ের সাজে – এমনটা কখনও দেখা যায়নি বলে দাবি করছেন অনেকে। তাহলে কী এমন প্রয়োজন পড়ল যে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এমনটা করতে হল? আর ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই যেটা বেরিয়ে আসছে – সেটা হল প্রচার।

অনেকে যেটা বলছেন, এদিন আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রূপশ্রীর এক নতুন ধরনের প্রচার করলেন। দুই জোড়া বর-কনেকে বিয়ের সাজে মঞ্চে হাজির করিয়ে রূপশ্রীর টাকার চেক হাতে ধরিয়ে আম পাবলিককে (পড়ুন বাংলার বেকার যুবক-যুবতীদের) বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ‘‘তোমরাও পাবে। কিন্তু তৃণমূলকে বাংলার ক্ষমতায় রাখতে হবে।’’ এর আগে এই রূপশ্রী প্রকল্পের টাকার চেকই তিনি মঞ্চে তুলে দিয়েছেন, কিন্তু সাধারণভাবে। তাতে আর যাই হোক কোনও চমক ছিল না। অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পের টাকার চেকের মাঝে রূপশ্রীর চেক আলাদা করে আম পাবলিকের চোখে পড়ত না। কিন্তু এদিন সোজা বর-কনেকে মঞ্চে তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন – তিনি যা বলেন তা করেন।

তাছাড়া রূপশ্রী প্রকল্পের টাকার চেক হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কোনও মেয়েকে কনে সাজিয়ে মঞ্চে তোলা যায়, তাতে দেখতেও বেশ লাগে। অন্য প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে তো আর সেই সুযোগ নেই। সুতরাং রূপশ্রী প্রকল্প আসলে কী – সেটা বাংলার আপামর জনতাকে বোঝাতে এর থেকে ভালো উপায় আর কী হতে পারে! চোখের সামনে জলজ্যান্ত বর-কনে রূপশ্রীর টাকার চেক হাতে নিচ্ছে – এর থেকে বড় প্রমাণই বা কী হতে পারে। সুতরাং এই সুযোগ ছাড়ে কে। পাশাপাশি বাংলার মহিলারা এখনও কোনও ছেলে-মেয়েকে বর-কনের বেশে দেখার জন্য উতলা হয়ে থাকেন। গ্রামের দিকে তো বর-কনে দেখার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তা সে ছেলে-মেয়ে যতই চেনা-জানা হোক না কেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মহিলাদের এই উতলা হওয়ার ব্যাপারটা ভালোমতই বোঝেন। অতএব সেটাই তিনি নিজের প্রচারের কাজে লাগিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -