মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর 3, 2024
HomeবৈঠকTripura Result: ঘরে বাইরে ধাক্কা, প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্নে নিজেই জল ঢাললেন তৃণমূল নেত্রী

Tripura Result: ঘরে বাইরে ধাক্কা, প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্নে নিজেই জল ঢাললেন তৃণমূল নেত্রী

- Advertisement -

অনামিকা চৌধুরি

ত্রিপুরায় ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ০। মেঘালয়ে ৫৬টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৫। এই হল গিয়ে বৃহস্পতিবারে তৃণমূলের ভোটলক্ষ্মী ভাণ্ডারের ফল। অথচ, গোয়ার পর এই দুই রাজ্যের মানুষকেই বাংলার মতো ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরিমাণ বাংলার থেকে বেশিই ছিল। কিন্তু তাতেও ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ের ‘লক্ষ্মীরা’ তৃণমূলের ওপর সদয় হল না। তৃণমূল নেত্রীর স্বপ্ন ছিল, অন্তত ত্রিপুরা যদি মুখ ফিরিয়েও নেয়, মেঘালয় ভাঁড়ার উপুর করে দেবে। আর সেই কারণেই মেঘালয়ের ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৬টি আসনে প্রার্থী দিয়ে বাজি ধরেছিল তৃণমূল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোটের ভাঁড়ার ভেঙে নির্বাচন কমিশন জানাল, ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রার্থীদের জমানত জব্দ তো হয়েই-ছে, মেঘালয়ে ১২জন বিধায়কের তৃণমূল নেমে এসেছে ৫জনে। অর্থাৎ, কিং হওয়া তো দূরে থাক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেঘালয়ে কিংমেকার হওয়ার স্বপ্নেও জল পড়েছে। এখন কী হবে?

ভোটের এমন ফল প্রকাশের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মুখ দেখাননি’। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মুখ্যমন্ত্রী সেজে’ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, ‘‘মেঘালয়ের মানুষকে ধন্যবাদ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় তকমাটা বাঁচিয়ে দিয়েছে।’’ একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপিকে গালাগালি দিতে গিয়ে ব্যালট বাক্স নিয়ে প্রশ্ন প্রায় তুলেই ফেলেছিলেন। কিন্তু এর আগে এনিয়ে চেল্লা-মেল্লা করেও যখন কিছু হয় নি, সুতরাং এবার সেটা বাধ্য হয়ে গিলে ফেলেছেন। হাজার হোক, ব্যালট বাক্স নিয়ে প্রশ্ন তুললে যে ৫টি আসন মেঘালয়ে পাওয়া গিয়েছে, সেটারও জবাব দিতে হবে! সুতরাং আপাতত এনিয়ে কথা না বাড়ানোই ভাল।

কথা হল, ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ে যা হয়েছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেকের ‘কান’ ধরে এর ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। কিন্তু সাগরদিঘিতে যা হল – তার ব্যাখ্যা কার কাছে নেবেন? হাজার হোক সাগরদিঘিতেও তো বলতে গেলে দিদি নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন! এমনিতেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের সবক’টি আসনে নিজে দাঁড়ান। এবার না হয় উপনির্বাচন ছিল বলে নিজের আত্মীয়কে টিকিট দিয়েছিলেন। তারপরেও ২৩ হাজার ভোটে হার! যে সাগরদিঘি প্রয়াত সুব্রত মুখার্জিকে জিতিয়েছে সেই সাগরদিঘিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয়র পরাজয়! এর ব্যাখ্যা কে দেবে?

বলতেই হয়, এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সত্যিই জননেত্রী! প্রার্থী যেহেতু তিনি, সুতরাং জবাবটা তিনিই দিয়েছেন। সেই নবান্নেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এর দায় মানুষের নয়। সাগরদিঘিতে ৬৫ শতাংশ লঘু ভোট। তাতে কী? এই দায় সংখ্যালঘুদেরও নয়। সাগরদিঘিতে হারের দায় কংগ্রেস – সিপিএম এবং বিজেপি জোটের। এই ৩ পার্টি মিলে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মহা চক্রান্ত করছে। এর আগে ২১এর বিধানসভা ভোটে মহাজোট করে বিজেপিকে এগিয়ে দিয়েছিল। এবার কংগ্রেসের প্রার্থীকে এগিয়ে দিয়েছে। তাই তৃণমূলের হার। কিন্তু যারা এভাবে তৃণমূলকে এভাবে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তারা ভবিষ্যতে চোখে সর্ষেফুল দেখবে।

এমন হুঁশিয়ারির অনেক মানে হতে পারে। কিন্তু তার ব্যাখ্যায় না গিয়ে এতটুকু বলি, এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর যে প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্ন – সেই স্বপ্নে নিজেই জল ঢেলেছেন। বলেছন, ‘‘২০২৪এর লোকসভা ভোটে তৃণমূল একাই লড়বে। মানুষের সঙ্গে জোট করে লড়বে।’’ অর্থাৎ, কংগ্রেস কিংবা সিপিএমের সঙ্গে জোট করবে না তৃণমূল। সুতরাং তৃণমূল নেত্রী যদি এই দুই দলের সঙ্গে জোট না করেন, তাহলে লোকসভা ভোটে মোদীকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখল করবেন কিভাবে? নীতিশ আর তেজস্বী তো আগেই জোট করে বিহারে সরকার গড়েছেন। তেজস্বীর ইচ্ছা নীতিশ প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর বিহারে মুখ্যমন্ত্রীর নম্বর আসবে। তাহলে বাকি রইল কে? অখিলেশ আর উদ্ধব। উদ্ধব যদি আবার শরদ পাওয়ারের পিছু পিছু সনিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে, অখিলেশ কি একা মমতার প্রধানমন্ত্রীত্বকে সমর্থন দেবে? সুতরাং এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘একলা চলো’র  ঘোষণায় পরিস্কার, ২০২৪-এ তাঁর আর প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে না। যদি না ভবিষ্যতে আবার ডিগবাজি খান।

শেষে এই কথাটা না বললেই নয়, বাংলার পাবলিক যাতে ভুলেছে তাতে কিন্তু অন্য রাজ্যের পাবলিক মোটেও ভুলছে না। বাংলার যে সব প্রকল্পকে সফল তকমা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়া, ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ে ‘বিক্রি’ করতে চেয়েছেন, তার তেমন কিন্তু খরিদ্দার পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, লক্ষ্মীরভাণ্ডারকে বাংলার বাইরে মানুষ পছন্দ করছে না। এগিয়ে বাংলার স্লোগানকে মোটেও বিশ্বাস করছে না। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বাংলার মানুষ নিজেকে দেখে শেখেনি, অন্যকে দেখে কি শিখবে? মাসে ৫০০ টাকার বিনিময়ে যে দুর্নীতির ঘুঘু বাংলায় বাসা বেঁধেছে, সেই বাসা কি আগামীদিনে খুঁচিয়ে ভাঙা হবে? সাগরদিঘি যে খেলা দেখিয়েছে, সেই খেলা কি ২০২৪-২৬ হবে? মাঝখানে আবার অন্য খেলা হবে না তো? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।  (প্রবন্ধের বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব)

আরও খবর
- Advertisment -

সবাই যা পড়ছেন

পছন্দের খবর