দিঘা: বাঙালির ছুটি কাটানোর সাধের জায়গা বলতে হয় সমুদ্র নয়তো পাহার। হয় দার্জিলিঙ, নয়তো দিঘা, মন্দারমণি। কলকাতার কাছে-পিঠে ঘোরার জায়গা বলতে দার্জিলিঙ কিংবা দিঘার থেকে জনপ্রিয় জায়গা বাঙালির কাছে আর অন্যকিছু হয় না।
এখন শীতের মরশুম। উৎসব আর আমেজের দিন। আর ঠান্ডা মানেই ঘুরতে যাওয়ার দিন। স্বাভাবিকভাবেই দিঘা, মন্দারমণি, এমনকি তাজপুরেও প্রায় সমস্ত হোটেল বুক হয়ে রয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র সৈকতগুলিতে নানান অপ্রিয় ঘটনা ঘটছে।
তাই এবার নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পর্যটকদের জন্য বিশেষ নিয়ম চালু করতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। এবার থেকে সমস্ত পর্যটকের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ হবে জেলা পুলিশের পোর্টাল অতিথি-তে। মূলত, অপরাধের ঘটনা ঠেকাতেই এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।
মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর-সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে উৎসবের মরশুমে অতিরিক্ত ভিড় বাড়ে। বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকেরা আসে। ভিড় যেমন বাড়ে, তেমনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সমুদ্রে স্নান করতে নেমে দুর্ঘটনা থেকে হোটেলে নানান অপরাধের ঘটনাও বাড়ে। অনেক সময়ই দুষ্কৃতীরা হোটেলের মধ্যে অপরাধ করে পগাড়পাড় হয়ে যায়, কিন্তু তার নাগাল পাওয়া যায় না। তাই অপরাধ ঠেকাতে এবার চালু করা হচ্ছে ‘অতিথি’ পোর্টাল। এই ই-পোর্টাল অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সহায় হবে।
কী আছে ‘অতিথি’ পোর্টালে
পুলিশ সূত্রে খবর, ‘অতিথি’ পোর্টালে পর্যটকদের সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত থাকবে। অর্থাৎ প্রতিটি হোটেলে আগত অতিথিদের নাম, তথ্যঃসহ পরিচয় সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য এই পোর্টালে নথিভুক্ত হবে, ঠিক যেমন হোটেলের খাতায় নথিভুক্ত করা হয়।
এই ‘অতিথি’ পোর্টাল পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবেই চালু করতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। হোটেলের মাধ্যমেই এই পোর্টালে অতিথিদের বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করা হবে। ফলে কোনও হোটেলে কোনও অপরাধমূলক কাজকর্ম হলে সহজেই এক ক্লিকে অভিযুক্তের হদিশ মিলবে।
পুলিশের কর্তারা কী বলছেন
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘অতিথি’ নামে নতুন এই পোর্টালটিতে হোটেলে আসা অতিথিদের সমস্ত রকমের পরিচয় তথ্য আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হোটেল, রিসোর্ট,হোম-স্টে গুলিকে। যার আইডি হলো (https://hotel.emdp.in )।
এই আইডি-তে গিয়ে হোটেল সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য আপলোড করা যাবে। আর অনলাইন মারফৎ সেটি জেলা পুলিশের হাতে পৌঁছবে। যার ফলে কোনরকমের টালবাহানা ছাড়াই সহজেই কিনাড়া করা যাবে যে কোনও রকম অপরাধের অভিযুক্তের।
এমনটা আগে করা হয়নি কেন
প্রশাসনিক কর্তারা বলছেন, এমন ব্যবস্থা আগেও ছিল। হোটেলে আগত অতিথিবৃন্দের সমস্ত তথ্য পুলিশের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নিয়ম আগেই চালু হয়েছিল। এমনকি আধার কার্ডের ফটোকপি পর্যন্ত থানায় পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ ছিল হোটেল মালিকদের কাছে। আসলে পুরোটাই ছিল খাতা-কলমে। আদতে সবসময় সেই নিয়ম সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না বলে পুলিশের দাবি।
আর তাতে কিছু ফাঁকফোকরও থেকে যাচ্ছিল। অনেক সময়েই কোনও খারাপ ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যেত অতিথির ঠিকানা ভুঁয়ো। হোটেল কিংবা রিসর্টের মালিকদের পক্ষে সে সব ভুঁয়ো কাগজ ধরে ফেলা সহজ ছিল না। যার সুযোগ নিত অনেকেই।
এবার পুরোটাই হবে ডিজিটাল
সেজন্যই এবার ই-পোর্টাল খুলতে চলেছে জেলা পুলিশ। যাতে ভুঁয়ো তথ্যকে ধরা যেতে পারে। এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তা-সহ সমস্ত রকমের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন একটি ই-পোর্টালের মাধ্যমে পাইলট প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। জেলার হোটেলগুলিকে একই ছত্রছায়ায় নিয়ে এসে এই ই-পোর্টাল চালুর উদ্যোগে জেলাজুড়ে কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।”
নতুন ব্যবস্থা নিয়ে কী বলছেন হোটেল মালিকরা
জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর হোটেল সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী। তবে এক্ষেত্রে হোটেলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে হবে। যার জন্য বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
আসলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর্যটনকেন্দ্র গুলিতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১২০০-র বেশি হোটেল-রিসর্ট এবং হোম স্টে রয়েছে। যার মধ্যে দিঘাতেই রয়েছে প্রায় ৫৫০টির বেশি হোটেল।
এছাড়াও মন্দারমণি ও দিঘা মোহনা থানার মধ্যে রয়েছে হোটেল। এর পাশাপাশি আবার জেলার শিল্প শহর হিসেবে পরিচিত হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুক, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট সহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও অনেক হোটেল। যেগুলিতে জেলার বাসিন্দা-সহ দূরদূরান্তের বহু পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে প্রতিনিয়তই।
সম্প্রতি দিঘার সৈকতে মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। মন্দারমণির হোটেলে দুষ্কৃতীদের গা-ঢাকা দেওয়ার খবরও এসেছিল। এই ধরনের ঘটনা রুখতেই এবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ পর্যটকদের তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করে রাখার উদ্যোগ নিল বলে মনে করা হচ্ছে। যা নিয়ে প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা।