HomeরাজনীতিRahul Gandhi: রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে বিজেপি কি ভুল করল?

Rahul Gandhi: রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে বিজেপি কি ভুল করল?

- Advertisement -

রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সাংসদ পদ খারিজ হয়েছে। আগামী ৬ বছর তিনি ভোটে লড়তে পারবেন না। আর তারপরই পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সারা দেশজুড়ে কংগ্রেসীরা প্রতিবাদ শুরু করেছে। শনিবার পশ্চিমবঙ্গে বাস-ট্রেন সব অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা।

পাশাপাশি রাহুল (Rahul Gandhi) ইস্যুতে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছেন মোদী বিরোধীরাও। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল করে মোদী সরকার কি ভুল করল? বিরোধীদের একাট্টা হওয়ার সুযোগ করে দিল? ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে বিজেপিকে এর খেসারত দিতে হবে না তো?

প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সাংসদ পদ খারিজ করেছেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। ‘মোদী’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে বৃহস্পতিবার রাহুলকে ২ বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছে গুজরাতের সুরত জেলা আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুক্রবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।

অর্থাৎ বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, যা হয়েছে নিয়ম মেনে হয়েছে। সংবিধান মেনে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, ‘‘রাহুল গান্ধী ইচ্ছে করেই একটা জটলা পাকানোর চেষ্টা করেছেন। সহানুভূতি আদায়ের জন্যেই এটা করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী চাইলে গতকালই গুজরাতের সুরাত জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে পারতেন। তাঁকে তো আর উকিল খুঁজতে হবে না! কিন্তু তিনি সেটা করেন নি। বরং দু’বছর জেলের সাজা হওয়ার পরেও চুপচাপ থেকেছেন।’

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা আবার এক কদম এগিয়ে এও বলছেন, রাহুল গান্ধীর এমনটা হওয়ারই কথা ছিল। কেননা রাহুল গান্ধীর অহংকারে পা পড়ে না। তিনি চাইলে লোকসভা চলবে, তিনি না চাইলে লোকসভা চলবে না – এটা তো হতে পারে না! বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুরের কথায়, ‘‘রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে তাঁর দলের নেতারাই খেলা খেলেছে। তাঁর অহংকারই পতন ডেকে এনেছে।’’

কিন্তু কংগ্রেস নেতারা এমন যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, বিজেপি সরকার ইচ্ছে করেই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই কাজ করেছে। কেননা, ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধী যেভাবে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছিলেন, তাতে মোদী সরকার ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে যাতে হারতে না হয় সেজন্য আগে-ভাগেই ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে কংগ্রেস নেতারা এমন যুক্তিও দিচ্ছেন, আসলে আদানিকে বাঁচাতেই এই কান্ড করেছে বিজেপি। কেননা, রাহুল গান্ধী আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য জয়েন্ট পার্লামেন্ট কমিটি বা জেপিসি গড়ার দাবি জানিয়েছিলেন। যদি জেপিসি গড়ে আদানিদের তদন্ত করা হতো তাহলে দুধ কা দুধ পানি কা পানি হয়ে যেত। সেই ভয়েই রাহুলকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষা হয়েছে।

যদিও কংগ্রেস নেতাদের দাবি, এভাবে কংগ্রেসকে দমানো যাবে না। রাহুল গান্ধীকে সংসদের বাইরে করে দিয়ে কংগ্রেসের মুখ বন্ধ করা যাবে না। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘‘সত্যিকথা যাঁরা বলেন, তাঁদের সংসদে রাখতে চায় না মোদী সরকার। কিন্তু আমরা সংসদের ভিতরেও প্রতিবাদে মুখর ছিলাম, বাইরেও মুখর থাকব।’’

কিন্তু এত যুক্তি তর্কের মধ্যে আসল প্রশ্নটা হল, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের ফলে বিজেপির ভালো না কি মন্দ হল? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এতে আর যাই হোক বিরোধীরা যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়ার সুযোগ পেলেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এর আগে সিবিআই এবং ইডির তদন্ত নিয়েও মোদী বিরোধী দলের নেতাদের এক সুরে কথা বলতে শোনা গিয়েছে। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে লাগানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এখন রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের ফলে মোদী বিরোধীরা হাতে আরও একটি হাতিয়ার পেলেন। এবং সেই হাতিয়ার শুধু যে কংগ্রেস পেয়েছে তা নয়, সমস্ত বিরোধী দলের নেতারাই সেটা লুফে নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের একসুরে কথা বলার সুযোগ বেড়ে গেল। সুতরাং সেই দিক দিয়ে দেখলে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ হল।

কিন্তু একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, বিরোধীরা একাট্টা হলেই যে ২০২৪-এ কেন্দ্র থেকে মোদী সরকারকে সরিয়ে দেবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কেননা, ২০১৯-এ বিরোধীরা সেই চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু তারপরেও বিজেপি আরও বেশি সংখ্যাক আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল। উল্টে ২০২৪-এ বিজেপির হাতে রামমন্দিরের মতো হাতিয়ার রয়েছে। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় যে রামমন্দির তৈরি হচ্ছে তার কাজ ২০২৪-এ সম্পূর্ণভাবে শেষ হবে। ভোটের আগে মন্দিরের উদ্বোধন করে বিজেপি কিংবা নরেন্দ্র মোদী যে সেই সময় হিন্দুত্বের কার্ড খেলবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর বিজেপির সেই কার্ডের জবাব বিরোধীদের কারও কাছে নেই।

তারপরেও প্রশ্ন উঠছে, রাহুল গান্ধীর এভাবে সাংসদ পদ খারিজ করা কি আটকানো যেত? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হয়তো মোদী সরকার চাইলে দু’চার দেরি করতেই পারত। দেখতে পারত রাহুল গান্ধী নিম্ন আদালতের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান কি না। আর তারপরই স্পিকার ওম বিড়লাকে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারত। কিন্তু বিজেপি সেই অপেক্ষাটা করেনি।

কারণ আর কিছুই নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করা। রাহুল গান্ধী যেভাবে নীরব মোদীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘চোর’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন, সেটা নিশ্চয় দেশের ‘চৌকিদারে’র ভালো লাগেনি। আর রাহুল গান্ধী যখন গুজরাতের নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে পড়িমরি করে উচ্চ আদালতে গেলেন না, তখন বিজেপি নেতাদের মনে হল – এ অহংকার ছাড়া আর কিছুই নয়। রাহুল গান্ধী আসলে বিজেপির ‘ক্ষমতা’ দেখতে চাইছেন। সুতরাং হয়ে গেল ছাঁটাই।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -