HomeবৈঠকAnubrata Mandol: ‘সোনার গৌড়’ কেস্টকে ছাড়তে দিদির এত কষ্ট কেন?

Anubrata Mandol: ‘সোনার গৌড়’ কেস্টকে ছাড়তে দিদির এত কষ্ট কেন?

- Advertisement -

অরণ্য রায়

অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandol) দিল্লি যাওয়া আটকাতে রাজ্য রাজনীতিতে যা কান্ড হচ্ছে, তাতে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে – এত কেন? কেন অনুব্রত মণ্ডলের যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) এত মাথা ব্যথা। এই মুহূর্তে অ্যাডিনো ভাইরাসে কলকাতা ও তার প্বার্শবর্তী জেলাগুলি ভয়ঙ্করভাবে আক্রান্ত। একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। খোদ কলকাতার বুকে শিশু হাসপাতালগুলিতে বেডের অভাব দেখা দিয়েছে। কিন্তু সেসব নিয়ে জরুরি কোনও পদক্ষেপ না করে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যুই না কি কো-মরবিডির কারণে হচ্ছে। সুতরাং এনিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। ব্যাস, তারপরই তিনি পড়ে গেলেন অনুব্রতকে (Anubrata Mandol) নিয়ে। কেন অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে, কিভাবে কেস্টর দিল্লি যাত্রা আটকানো হবে – সে নিয়েই এখন তৃণমূল নেত্রীর যত মাথাব্যথা। অথচ, একদিন আগেই তৃণমূলের বড় স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরা, মেঘালয়ে দল গো-হারা তো হেরেইছে, খোদ সাগরদিঘি বিধানসভা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে তৃণমূল নেত্রী যতটা না কষ্ট পেয়েছেন, তার থেকে তিনি বেশি কষ্ট পাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandol) দিল্লি যাত্রা নিয়ে। আর সেটা যদি না হতো তাহলে এভাবে অ্যাডিনো ভাইরাস আর শিশুমৃত্যু নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করতে বসে অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা নিয়ে সওয়াল তুলতেন না।

কথা হচ্ছে, অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এত নাছোড়বান্দা কেন? কই, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে নিয়ে তো এমনটা দেখা যায় নি। বেচারা পার্থ, আজও তিনি তৃণমূলের গুণগান গেয়ে যাচ্ছেন। আদালতে আসতে-যেতে তৃণমূলের আরও সমৃদ্ধি কামনা করছেন। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন গলল না। অথচ, অনুব্রতর কোনও কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারছেন না। তৃণমূলের আরও বহু নেতায় নানা দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক জেলে ঢুকেছেন বা ঢুকছেন। তাঁদের কাউকে নিয়ে তৃণমূল কোনও কথা বলে না। কিন্তু অনুব্রতকে নিয়ে তৃণমূল একেবারে মরিয়া। কপিল সিব্বালের মতো ঝানু আইনজীবীকে অনুব্রতর মামলা নিয়ে দিল্লিতে রোজ ছোটাছুটি করানো হচ্ছে। তাঁর কোটি কোটি টাকার খরচা কে দিচ্ছে কে জানে!

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা যদি বলি তাহলে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের কথা বলতেই হয়। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মোট ৩৮টি সংগঠন দলমত নির্বিশেষে পথে বসেছে। সরকারি কর্মচারীরা এরইমধ্যে কর্মবিরতি পালন করেছে। আগামীদিনে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার বদলে তাঁদের পালটা হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে , ‘‘পোষালে করুন। না হলে ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্র সরকারের চাকরি করুন।’’ ভাবুন একবার। যাঁরা তাঁদের ন্যায্য দাবি চাইছেন তাঁদের জন্য এই হুঁশিয়ারি। আর যে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বালি-পাথর-কয়লা-গরু-মস্তানি-তোলাবাজি-পুলিশকে বোমা মারার হুঁশিয়ারির মতো ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ, সেই কেস্টর দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের দরদের বহরটা দেখুন।

বলতে দ্বিধা নেই, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে পাকিস্তানের বেশ মিল রয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা যেমন দেশের কথা না ভেবে তাঁদের আখের গোছাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও প্রায় সেই রকম। পাকিস্তানের অর্থনীতি যেমন ধারের টাকায় চলছে, ঠিক তেমনই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিও এখন ধারের টাকাতেই চলছে। কী করে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হয়ে উঠবে, কী করে রাজ্যের আয় বাড়বে, সত্যি সত্যি বেকার সমস্যার সমাধান হবে – সেসব নিয়ে ভাবনার বদলে এখন কী করে পঞ্চায়েত ভোট সামাল দেওয়া যায়, কী করে তৃণমূলকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ধরে রাখা যায় – তারই ছক কষা হচ্ছে। এগিয়ে বাংলা বলে স্লোগান দিলেই যদি বাংলা এগিয়ে যায় – তাহলে কিছু করার প্রয়োজন কী! ৫০০ টাকা করে দিয়েই যদি খেলা ঘুরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে আর শিল্প শিল্প করে লাভ কি!

রাজনীতিতে তুষ্টিকরণের রাজনীতি নতুন কথা কিছু নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রণকৌশলকে এমন সূক্ষ্ম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে এটা তুষ্টিকরণ না কি বাংলার উন্নয়ন – সেটার ফারাক পাবলিকের বোঝার কথা নয়। পকেটে ৫০০টাকা আর ফ্রিতে সব পেলেই যদি উন্নয়ন হয় তাহলে বলতে দ্বিধা নেই বাংলায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে। বাংলার মানুষ না খেয়ে মরছে না। কিন্তু ধারের টাকায় এই ফ্রি-তে ষোলো আনা পাওয়া কতদিন চলবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জানেন, তিনি যতদিন বাংলার ক্ষমতায় থাকবেন – ততদিনেই পশ্চিমবঙ্গের মাথায় যা ঋণের পরিমাণ হবে তাতে বাংলার সরকারকে আর কেউ ধার দিতে চাইবে না। কিন্তু তারপরেও তিনি লাগাতার সামাজিক প্রকল্পের নামে টাকা বিলিয়ে চলেছেন। বাংলার মানুষকে কুড়েমির এক গোপন ফাঁদে ঠেলে দিচ্ছেন। এর পিছনে কারণ কি?

কারণ, এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার মানুষকে দেওয়ার কিছু নেই। কলকাতাকে লন্ডন বানানো কিংবা উত্তরবঙ্গকে সুইৎজারল্যান্ড বানানো – মমতা সরকারের ক্ষমতায় কুলোবে না। সুতরাং পাড়ায় পাড়ায় ফুলের টব বসিয়ে পার্ক আর রাস্তায় রাস্তায় ফ্যানসি চিনা লাইট লাগানো ছাড়া মমতা সরকারের কোনও উন্নয়নের কাজ নেই। আর ফ্রি-র সব প্রকল্পের হিসাব যখন তৃণমূলের নেতারাই সামলে নিচ্ছেন, সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে লোকসানেরও কিছু নেই। কিন্তু বড় ধরনের লোকসান হতে পারে যদি অনুব্রত মণ্ডলকে ইডি কিংবা সিবিআই দিল্লি নিয়ে চলে যায়। কেষ্ট দিল্লি গেলে বাংলায় তৃণমূলের শিকড়ে টান পড়বে। হাজার হোক, তৃণমূলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তো অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতারাই। সুতরাং ‘সোনার গৌড়’ অনুব্রতকে দিদি ছাড়েন কি করে? অনুব্রতকে ছেড়ে দেওয়া মানে বাংলার কুর্সির খুঁটিতে টান পড়া। তৃণমূলের পার্টিফান্ডে টান পড়া। অতএব, বাঙালির পকেটে ৫০০টাকা দিয়ে, সস্তায় মদের ব্যবস্থা করে দিয়ে, টাকার বিনিময়ে ভুয়ো শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়ে বাকি সময়টা তো অনুব্রতর পিছনেই দিতে হবে। কী বলেন?

   (প্রবন্ধের বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব)    

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -