HomeবৈঠকAmit Shah: মোদীর বদলে অমিত শাহকেই ‘হিরো’ মানছেন সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপরা

Amit Shah: মোদীর বদলে অমিত শাহকেই ‘হিরো’ মানছেন সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপরা

- Advertisement -

দোলনচাঁপা দাস

২৯ নভেম্বর ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের সভা নিয়ে এখন বঙ্গ বিজেপির নেতারা টগবগ করে ফুটছেন। তাঁদের এখনকার আত্মবিশ্বাস দেখে ঘাসফুল শিবিরের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তৃণমূল নেতাদের অনেকেই অমিত শাহকে (Amit Shah) ‘গব্বর সিং’য়ের সঙ্গে তুলনা টানছেন। কিন্তু সেই তুলনা টানতে গিয়েও তাঁদের গলার স্বর কেঁপে যাচ্ছে। কেননা, বলা তো যায় না এরপর হয়তো তাঁর পিছনেই ইডি-সিবিআই লেগে যাবে! সুতরাং ঘাসফুল শিবির অমিত শাহকে (Amit Shah) আক্রমণ করছেন বটে কিন্তু নতুনত্ব তেমন কিছু নেই। তাছাড়া, খোদ মমতা কিংবা অভিষেকরাও কেমন যে সিঁটিয়ে রয়েছেন। তাঁদেরও মুখ দিয়ে এনিয়ে তেমন কোনও আওয়াজ বেরুচ্ছে না। এটা একধরণের রাজনৈতিক চাল হতে পারে। অমিত শাহকে (Amit Shah) নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেই গুরুত্ব বাড়বে। সুতরাং মুখবন্ধ রাখাই ভাল। দেখাই যাক না ২৯ তারিখ তিনি কী বলেন? সেটার অপেক্ষাতেই হয়তো রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই হয়তো তিনি এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন।

কিন্তু অন্যদিকে, মানে পদ্মশিবিরে অমিত শাহর (Amit Shah) এবারের বঙ্গ সফরকে সামনে রেখে সাজসাজ রব চলছে। এরইমধ্যে রুদ্রনীল ঘোষরা মমতা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে গান বেঁধে ফেলেছেন। খোদ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অমিত শাহর সভামঞ্চের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখছেন। সেই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় হুলুস্থূল কান্ড বাঁধিয়ে দিয়েছেন। এবং বিধানসভায় ‘চোর চোর’ স্লোগান দিতে গিয়ে পুরো শীতকালীন অধিবেশনটাতে সাসপেন্ড হয়েছেন। আরেক জনের কথা না বললেই নয়। তিনি দিলীপ ঘোষ। তাঁকে বহুদিন পর মেদিনীপুরে কোনও বড় সভা করার চেষ্টা করতে দেখা গেল। তবে তিনি তাতে সাফল্য না পেলেও শুভেন্দু-সুকান্তদের পাশে পেয়েছেন। সব মিলিয়ে অমিত শাহকে ঘিরে বঙ্গ বিজেপি এই মুহূর্তে আনন্দে, উৎসাহে, উত্তেজনায় তুঙ্গে রয়েছে।

কিন্তু এরইমাঝে একটা প্রশ্ন উঁকি মারছে। আর সেই প্রশ্নটা হল – পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি কি অমিত শাহর নেওটা হয়ে গেল? অমিত শাহ এলে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, অমিত শাহ না এলে ঝিমিয়ে পড়ছে। এমনকী বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা কবে বাংলায় আসেন, কোথায় সভা করেন – তার ঠিক ঠাক মতো খবর পাওয়া যায় না। কিন্তু অমিত শাহ এলেই ঝিমুনি কাটিয়ে বঙ্গ বিজেপি চাঙ্গা হয়ে একেবারে নাচতে শুরু দিচ্ছে। এর পিছনে ব্যাপারটা কী? তাহলে কি নরেন্দ্র মোদীর থেকেও অমিত শাহকে কাছে পেয়ে বঙ্গ বিজেপির নেতারা বেশি ভরসা পাচ্ছেন?

মোদীর থেকেও শাহকে বঙ্গ বিজেপির নেতারা বেশি ভরসা করছেন – এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হিসেবে বলতেই হয়, মোদীকে পাওয়া আর আকাশের চাঁদ পাওয়া দুটোই প্রায় সমান ব্যাপার এটা এরাজ্যের বিজেপির নেতারা বেশ বুঝে গিয়েছেন। তাই মোদীর বদলে মোদীর ‘মন কি বাত’ শুনতেই তাঁরা বেশি করে মন দিচ্ছেন। দ্বিতীয় কারণ, অমিত শাহ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি না হলেও পর্দার আড়ালে আসল কাজটি এখনও তিনিই করছেন। খাতায়-কলমে জে পি নাড্ডা হয়তো পদটি সামলাচ্ছেন ঠিকই – কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় পদটির রণকৌশল তৈরি যাবতীয় দায়িত্ব এখনও বর্তায় এই অমিত শাহর ওপরেই। সুতরাং কাকে ওপরে তোলা হবে, কার ডানা ছাঁটা হবে – সবেতেই অমিত শাহ-ই শেষকথা। অতএব অমিত শাহ বাংলায় এলে বঙ্গ বিজেপির প্রত্যেক নেতাকেই উৎসাহী হয়ে উঠতে হয়। যে দিলীপ ঘোষের কিছুদিন আগে ডানাছাঁটা গিয়েছে তাঁকেও তাই মেদিনীপুরে জনসভা করার চেষ্টা করতে হয়। তা হোক বা না হোক। অন্তত দেখানো যে তিনি চেষ্টাটা অন্তত করেছেন।

তিন নম্বর কারণ হিসেবে বলতে হয়, এই রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি অমিত শাহর মন্ত্রকের কাছেই রয়েছে। সিবিআই-ইডি থেকে শুরু করে সিএএ, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ – সবেতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যুক্ত। সুতরাং অমিত শাহ যখন বাংলায় আসেন তখন বিজেপির নেতারা মুখিয়ে থাকেন নতুন কিছু শোনার জন্য। বা কিছু বলার জন্য। এনিয়ে খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের স্বীকারোক্তি হল, ‘‘আমরা বাংলার পরিস্থিতির কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরব। তিনিও বাংলার পরিস্থিতির কথা বলবেন। এবং চোরেরা যে আগামী দিনে জেলে যাবে, যেটা বাংলার মানুষ চাইছে সেই আশ্বাসও তিনি দেবেন।’’

আর চার নম্বর বিষয়টি হল, অমিত শাহর সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূল নেতারা যতটা না চিন্তায় থাকেন মোদীকে নিয়ে ততটা থাকেন না। এরাজ্যের তৃণমূল নেতারাও বেশ বুঝে গিয়েছেন বকেয়া টাকা দিক বা না দিক দিদি চাইলে মোদী বৈঠক করেন। সুতরাং তাঁকে ততটা ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু অমিত শাহর সঙ্গে তেমনটা সম্ভব নয়। যে ক’টা বৈঠকে অমিত শাহর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিতে গিয়েছেন – প্রায় সবক’টাতেই গুরুত্বহীন হয়ে থেকেছেন। এবং বৈঠকের পর হয়ত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে। তাছাড়া মাঝে মধ্যেই এই রিপোর্ট চাই, সেই রিপোর্ট চাই বলে নানান নির্দেশ তো রয়েইছে। মোদীর প্রধানমন্ত্রী দফতর কিন্তু এতটা বাংলাকে চাপে রাখে না। সুতরাং তৃণমূল নেতাদের ভয় দেখাতে হলে বাংলাতে যে মোদীর থেকে অমিত শাহকেই বেশি দরকার সেটা ভালোমতই বুঝে গিয়েছেন এ রাজ্যের সুকান্ত-শুভেন্দুরা।

(লেখকের বক্তব্য একান্তই তাঁর নিজস্ব)

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -