গুয়াহাটি – মহা ফ্যাসাদে পড়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এবং তাতে মুখ পুড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদেরও। বিশেষ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে নতুন করে এতে অস্বস্তিতে পড়বেন সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এতদিন যে হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে উত্তর-পূর্বের ‘যোগী’ বলা হতো, সেই অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ‘ক্রসকারেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তরফে আরটিআই করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করা হয়েছে, হিমন্ত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই নগাঁও জেলায় কলিয়াবরে দারগাজি গ্রামের পাঁচ বাসিন্দার কাজ থেকে ৫০ বিঘা ২ কাঠা কৃষিজমি কেনেন হিমন্তর স্ত্রী রিণিকি ভুঁইঞা শর্মা। কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ উদ্যোগ স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদ যোজনা থেকে ১০ কোটি টাকার সরকারি সাহায্যও আদায় করে রিণিকির সংস্থা ‘প্রাইড ইস্ট এন্টারটেনমেন্ট’।
এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই মাঠে নেমেছে অসম কংগ্রেস এবং তৃণমূল। এ সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র পেশ করে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের জন্য ‘কিষাণ সম্পদ’ প্রকল্পে ভর্তুকির কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে নিজের পরিবারের জন্যেও ভর্তুকির বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন।’’
অন্যদিকে, অসমের তৃণমূলের মিডিয়া ইনচার্জ অভিজিত মজুমদার বলেন, ‘‘শর্মা পরিবারের বিরুদ্ধে আগেও অন্যায় ভাবে জমি কেনা, জমির চরিত্র বদল করার মতো অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে হলে এত ক্ষণে কেন্দ্র সিবিআই, ইডি পাঠিয়ে দিত। তাই আমাদের দাবি, অসমেও শর্মা পরিবারের জমি সংক্রান্ত ঘটনার তদন্তভার ইডিকে দেওয়া হোক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সর্বদা সততার বাণী দেওয়া ও নীতিকথা আওড়ানো হিমন্তের পরিবার ও সরকার দুইই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।’’
যদিও দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা পালটা বলেছেন, ‘‘আমার স্ত্রী যে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত, সেই সংস্থার কেউই সরকারের থেকে কোনও আর্থিক ভর্তুকি নেননি।’’ কিন্তু এর পরেই কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছেন, ‘‘খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের ওয়েবসাইট স্পষ্ট ভাবে ব্যক্তিটির নাম এবং তিনি যে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত তা বলা হয়েছে। ১০ কোটি সরকারি অনুদানও অনুমোদনের কথা জানানো হয়েছে। ওয়েবসাইটটি হ্যাক হয়ে থাকলে দয়া করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে রিপোর্ট করুন।’’
আসলে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার স্ত্রী ও ছেলের নামে একটি সংস্থা রয়েছে। যে সংস্থা বেশ কিছু সংবাদ ও বিনোদন চ্যানেল, চা বাগান, হোটেল, রিসর্ট স্কুল, সংবাদপত্র-সহ বহু ব্যবসায় জড়িত। নিয়ম হল, সিলিং আইনানুযায়ী কেউ ৪৯.৫ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিক হতে পারে না। ‘ক্রসকারেন্ট’-এর দাবি, তাই মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী জমি কেনার পরেই তার শ্রেণি বদলে শিল্পোদ্যোগে জড়িত জমি করে দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে ‘প্রাইড ইস্ট এন্টারটেনমেন্ট’ সেখানে ‘অ্যাগ্রো প্রসেসিং ক্লাস্টার’ নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্রীয় সাহায্যের আবেদন করে ও ১০ কোটি টাকা পেয়েও গিয়েছে। গোটা প্রক্রিয়া মাত্র ১০ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। কী ভাবে বিনোদন সংস্থাকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়া বাবদ কেন্দ্র সাহায্য দিল- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।