Homeবৈঠকশেখ শাহজাহান যেন দ্বিতীয় কেস্ট, বাম জমানায় মাছের কারবারি থেকে তৃণমূল জমানায়...

শেখ শাহজাহান যেন দ্বিতীয় কেস্ট, বাম জমানায় মাছের কারবারি থেকে তৃণমূল জমানায় ‘হাঙর’!

- Advertisement -

কলকাতা – কেস্টর সঙ্গে শাহজাহানের যেন অনেক মিল। দুজনেরই জীবন শুরু মাছের কারবার দিয়ে। তারপর তৃণমূলে ঢুকতেই আঙুল ফুলে কলাগাছ!

কাস্তে-হাতুড়ির জমানায় মাছের ভেড়ির কারবারি। সেই শাহজাহানই এখন সন্দেশখালিতে তৃণমূলের ‘বড়’ নেতা! শুধু তাইনয়, বীরভূমে যেমন অনুব্রত ‘বাঘ’, তেমনই সন্দেশখালিতে শাহাজাহান ‘হাঙর’। এমন কথায় কটাক্ষ করে বলছেন বিরোধীরা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মাছের কারবারি থেকে এত কম সময়ে কী করে এলাকার ‘হাঙর’ হয়ে উঠলেন শাহাজাহান? এলাকার রাজনৈতিক গল্প বলে, শাহজাহানের মামা মোসলেম শেখ ছিলেন সরবেড়িয়া এলাকার দাপুটে সিপিএম নেতা তথা পঞ্চায়েত প্রধান। জানা গিয়েছে, তাঁর হাত ধরেই কাঁচা টাকা চোখে দেখা শুরু শাহজাহানের। সৌজন্যে মাছের ভেড়ি।

কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভেড়ির কারবারের আগে শাহজাহানের পেশা ছিল অন্য। সন্দেশখালি-সরবেড়িয়া রুটে ট্রেকারের পাদানিতে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের থেকে ভাড়া আদায়ের কাজ করতেন তিনি। তার পর মামা হাত রাখেন ভাগ্নের মাথায়। ক্রমশ বিত্তবান হতে থাকেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বাম জমানার শেষ ১২ বছর, সন্দেশখালি এলাকায় মোসলেম ছিলেন একটি বড় নাম। উত্তর ২৪ পরগনারই বারাসত ব্লকের শাসনের দিকে যেমন ভেড়ি নিয়ন্ত্রণ করতেন সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টার, তেমনই সন্দেশখালির ভেড়ি নিয়ন্ত্রণে মামা-ভাগ্নে জুটি কাজ করতেন।

আরও জানা গিয়েছে, মামা সিপিএমের নেতা হলেও ভাগ্নে শাহজাহান সেই অর্থে কখনও নেতা ছিলেন না। নিজের এলাকায় কয়েকটি বুথে কেবল ভোট করাতেন। ট্রাকের পাদানি থেকে অর্থের স্বাদ পাওয়া শাহজাহান ক্ষমতার বৃত্তে থাকা শুরু করেছিলেন বাম জমানাতেই। তিনি সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অধুনা প্রয়াত অবনী রায়েরও ‘কাছের’ ছিলেন বলে খবর। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়া বুঝে ২০১০ থেকেই সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন শাহজাহান।

স্থানীয় লোকেরা বলেন, ২০০৪ সাল থেকেই শাহজাহান মোটামুটি পয়সা করা শুরু করে ফেলেছিলেন। যা অনেকের চোখেও লাগত। কিন্তু ভিত মজবুত করে রেখেছিলেন শাহজাহান। কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কার ছেলের অসুখ, কার সন্তানের বইখাতা কিনতে হবে— শাহজাহানের কাছে গেলেই মুশকিল আসান।

এরপর ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। কিন্তু মামা মোসলেম তখনও সিপিএমে। এমনকি, সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতও দখলে রাখে বামেরা। কিন্তু মামা-ভাগ্নের দু’জনের পথ তখন দু’টি দিকে বেঁকে গিয়েছে। এক দিকে ভাগ্নে তৃণমূলের নেতা। অন্য দিকে মামা সিপিএম।

মোসলেম যে বাহিনী তৈরি করেছিলেন, শাহজাহান তাতেও ভাঙন ধরাতে থাকেন। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, বছর কয়েক আগে মামাকে লাল পতাকা ছেড়ে ভাগ্নের দলে নাম লেখাতে হয়। শাহজাহান এখন তৃণমূলের সন্দেশখালি-১ ব্লকের সভাপতি। পাশাপাশি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ।

বিজেপির বক্তব্য, বাম জমানায় পেশিশক্তি দিয়ে ভেড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতেন শাহজাহান। তৃণমূল জমানায় সেটাই করেন প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে। জেলার রাজনীতির ওয়াকিবহালদের অনেকের বক্তব্য, শাহজাহানকে তৃণমূলে আশ্রয় দিয়েছিলেন এখন জেলবন্দি মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

কারণ, সিপিএমের নেতা মামা মোসলেমকে প্রতিহত করতে ভাগ্নে শাহজাহানকেই তুরুপের তাস করেছিলেন বালু। বহুলচর্চিত কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ফর্মুলায় গোটাটা হয়েছিল। অনেকের মতে, দানধ্যানের জন্য নিজের এলাকায় শাহজাহানের যে অপরিসীম জনপ্রিয়তা রয়েছে। অনেকটা ‘রবীনহুডে’র মতো ব্যাপার আর কী!

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে শুক্রবার সকালে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সামনে বেধড়ক মার খেয়ে রক্ত ঝরাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। তবে সরবেড়িয়ায় মুখে মুখে ফিরছে ট্রেকারের পাদানি থেকে রাজনীতির শাহজাহান হয়ে ওঠা নেতার উত্থান-কথা।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -