Homeবৈঠকএখনই লোকসভা ভোট হলে ৩৫ নয় মোটে ১৮! বঙ্গ বিজেপি নেতাদের স্বপ্নে...

এখনই লোকসভা ভোট হলে ৩৫ নয় মোটে ১৮! বঙ্গ বিজেপি নেতাদের স্বপ্নে জল ঢালল সমীক্ষা

- Advertisement -

তুষার খাসনবিশ

২০২৪ এর লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ৩৫টি আসন জেতার টার্গেট দিয়েছেন অমিত শাহ। সেই টার্গেটকে সামনে রেখেই আগামী ভোটের জন্য ঘুঁটি গোছাতে শুরু করেছেন শুভেন্দু-সুকান্তরা। খোদ অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দিশা নির্দেশ করতে বড়দিনের সন্ধ্যায় কলকাতায় এসেছেন। কিন্তু ঠিক তার আগে সমীক্ষায় উঠে এল ২০২৪ এর লোকসভা ভোটের আজব ফলাফল।

প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, লোকসভা ভোটের এখনও না না করে মাস ৩ বাকি রয়েছে। ফলে এখনকার সমীক্ষা আদৌ লোকসভা ভোটের প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে মিলবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করাই যায়। কিন্তু এরপরেও বলতে হয়, তৃণমূল এবং বিজেপি – দুই দলই প্রায় আগামী লোকসভা ভোটের রণকৌশল ঠিক করে ফেলেছে। মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শাসক ও বিরোধী দুই দলের প্রচার কৌশলও।

বিজেপি যে অযোধ্যার রাম মন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দুত্ব ও তৃণমূলের দুর্নীতিকেই আগামী লোকসভা ভোটের প্রধান হাতিয়ার বানাতে চলেছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আবার উলটোদিকে তৃণমূল বাংলার উন্নয়ন, সামাজিক প্রকল্পে মমতার অবদান এবং কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকেই যে বিজেপির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে সেটাও সুনিশ্চিত।

এই পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে বাংলার রাজ্য রাজনীতির যা পরিস্থিতি তাতে তৃণমূল এবং বিজেপি – দু‘দলের নেতারাই এনিয়ে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন। ফলে লোকসভা ভোটে যে বঙ্গ রাজনীতিতে শাসক বিরোধীর রণকৌশলে বিরাট কোনও পরিবর্তন হবে না, সেটা ধরে নেওয়ায় যায়। অতএব এখন করা সমীক্ষাকে একেবারে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

কিন্তু অবাক করার মতো কথা হল – সমীক্ষা যা উঠে এসেছে। এই সমীক্ষায় তৃণমূল নেতারা মুখে যাই বলুন না কেন – তাঁরা যে খুশি হবেন সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যদিও বিজেপি নেতারা এনিয়ে ঘোর আপত্তি তুলতে পারেন। এবং তুলবেনও। কেননা, অমিত শাহর দেওয়া টার্গেটের ধারে-কাছেও বিজেপির ঘেঁষার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সমীক্ষা বলছে, এই মুহূর্তে ভোট হলে ৪৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে তৃণমূল। এদিকে যদি বাম ও কংগ্রেসের জোট হয়, তাহলে তারা পেতে পারে ৭ শতাংশ ভোট। অপরদিকে বিজেপির ঝুলিতে বাংলা থেকে যেতে পারে ৩৯ শতাংশ ভোট। এদিকে যদি তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়ে, তাহলে তাদের সম্মিলত ভোট শতাংশ প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেলেও যেতে পারে।

এই আবহে বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেতে পারে ২৩ থেকে ২৫টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ১৬ থেকে ১৮টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস যদি জোটে থাকে, তাহলে তারা পেতে পারে ০ থেকে ২টি আসন। তবে এই ক্ষেত্রে তৃণমূল ও কংগ্রেস যদি জোট করে লড়াই করে, তাহলে এই অঙ্ক বদলাতে পারে।

এদিকে সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ৩৬ শতাংশ মানুষ জানান, তাঁরা মোদীর কাজে খুবই সন্তুষ্ট। এদিকে ৩৭ শতাংশ মানুষের দাবি, তাঁরা ততটাও সন্তুষ্ট নন। আর ৩৩ শতাংশ মানুষের দাবি, তাঁরা মোদীর কাজে অসন্তুষ্ট। এই আবহে বিজেপির ভোট শতাংশর সাথে মোদীর প্রতি সন্তুষ্টির তুলনামূলক সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে। 

তবে মোদী বা রাহুলের মধ্যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে কাকে সমর্থন করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের ৬০ শতাংশ মানুষই নাকি বলেছেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীকেই দেখতে চান। এদিকে সমীক্ষায় মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষকে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। আর ২ শতাংশ মানুষের জবাব, এই দু’জনের মধ্যে কাউকেউ বেছে নিতে চান না তাঁরা। আর ৩ শতাংশ মানুষ জানান, তাঁরা জানেন না।

সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ দাবি করেন, তাঁরা মোদীর কাজে ততটাও সন্তুষ্ট নন। আর ২১ শতাংশ মানুষ জানান, মোদীর কাজে তাঁরা অসন্তুষ্ট। আর মোদী বা রাহুলের মধ্যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে হলে দেশের ৫৯ শতাংশ মানুষই মোদীর দিকেই ঝুঁকে। এদিকে সমীক্ষায় মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।

সব মিলিয়ে সমীক্ষায় একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এবারও মোদীই দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। অন্তত এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতির হাওয়া তাই বলছে। যদি না বড় কোনও অঘটন ঘটে কেন্দ্রে বিজেপিই ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে – একথা কট্টর মোদী বিরোধীরাও স্বীকার করেন।

 

কিন্তু বাংলায় বিজেপির এমন দশা কেন? এত দুর্নীতির অভিযোগের পরেও যদি বাংলার মানুষের তৃণমূল কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর থেকে বিশ্বাসের টনক না নড়ে থাকে তাহলে সেটা নিশ্চয় শুভেন্দু-সুকান্ত এবং অবশ্যই শাহ-মোদীদের জন্য চিন্তার বিষয়।

এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি তার তূণে থাকা সবক‘টি তিরই চালাবে। ঝুলিতে থাকা সব অস্ত্রই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। হিন্দুত্ব, দুর্নীতি, সোনার বাংলা সবই তাতে থাকবে। কিন্তু তারপরেও যদি বিজেপি যদি ১৮টি লোকসভা আসনেই আটকে থাকে তাহলে বঙ্গ বিজেপির নেতারা নির্ঘাত দিল্লিতে ধ্যাতানি খাবেন।

তবে মন্দের ভাল, সমীক্ষায় এধরনের ফলাফলের আভাস উঠে আসার ফলে বিজেপির জন্য একদিক থেকে ভালোই হবে। কেননা, নিজেদের রণকৌশল শুধরে নেওয়ার জন্য এখনও হাতে কিছুটা সময় আছে। আর যদি গোয়ার্তুমি করে ২১এর বিধানসভা ভোটের মতোই ‘আবকি বার ২০০ পার’ স্লোগান ধরেই ঝুলে থাকে তাহলে ফের বাংলা দখলের স্বপ্নে এক বালতি জল পড়তে পারে।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -