Homeরাজনীতিবিধায়ক-মন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধি অথচ নিজে নেবেন না, কীসের প্রমাণ দিতে চান মমতা

বিধায়ক-মন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধি অথচ নিজে নেবেন না, কীসের প্রমাণ দিতে চান মমতা

- Advertisement -

কলকাতা – আরেকবার কালীঘাটের সেই টালির ঘরের গল্প মনে করিয়ে দিলেন।

বৃহস্পতিবার রাজ্যের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করলেন। অথচ নিজের বেতন বাড়ালেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রতি স্তরেই ৪০ হাজার টাকা করে বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে এতদিন যে বিধায়কদের বেতন ছিল ২১ হাজার টাকা, তাঁরা এখন ৬১ হাজার টাকা পাবেন। সঙ্গে ভাতা ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আগে বিধায়করা পেতেন মোট ৮১ হাজার টাকা। এখন ৪০ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধির পর বিধায়করা পাবেন ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। 

অন্যরাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বিধায়কদের বেতন যে খুবই কম, সেকথা জানিয়ে বিধানসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের বিধায়কদের বেতন দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। তাই আমাদের সরকার বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করার পরই এদিন বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়করা হাততালি দিতে শুর করেন। সকলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার প্রশংসা করতে শুরু করেন। সেই প্রশংসা আরও বৃদ্ধি পায় যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় ঘোষণা করেন, তিনি নিজের বেতন এক পয়সাও বাড়াবেন না। তবে এনিয়ে খানিকটা মান-অভিমানের খেলাও হয়।

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিনয়ী হয়ে বলেন, সকলের বেতন বাড়ল, শুধু মুখ্যমন্ত্রী নিজে নিলেন না, এ কেমন করে হয়! স্পিকার বলেন, “আপনি বেতন নেন না, সেটা আপনার মহানুভবতা। কিন্তু সংশোধনটা আপনার ক্ষেত্রে হলেও ভাল হতো। অন্তত খাতায়-কলমে। নইলে ঠিক দেখায় না।”  হাত তুলে নমস্কার করে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন মমতা। 

এর পর উঠে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, “স্পিকারকে সম্মান জানিয়েই বলছি, সাত বারের সাংসদ আমি। ১ লক্ষ টাকারপ বেশি পেনশন পাই। কিন্তু একটি পয়সাও নিই না। বিধায়ক এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও এক পয়সা নিইনি কখনও। আমি মনে করি, মা-মাটি-মানুষের সরকার, যতটা প্রয়োজন, ততটাই দরকার। বাইয়ের রয়্যালিটিতেই চলে যায় আমার।” 

মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের এই বক্তব্যের পরই অনেকে দুয়ে দুয়ে চার করছেন। কেননা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথাগুলি এই প্রথম বললেন এমন নয়। বহুবার তিনি জনসভায়, ভোটের প্রচারে নিজেকে টাকা-পয়সার উর্দ্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যেদিন থেকে তাঁর দল কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হতে শুরু করেছে সেদিন থেকে কথা ঘন ঘন বলাও শুরু করেছেন।

কিন্তু তা বলে সবার বেতন যখন বাড়ানো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর বেতন বাড়বে না কেন? মুখ্যমন্ত্রী পদ আর ব্যক্তি মমতা কি এক? এরপরে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলে তাঁর বেতনেরই বা কী হবে? এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আর এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টালির ঘরের ছাদের কথাও উঠে আসছে।

এতদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরেও যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও তাঁর টালির ঘরের বাড়িটি সযত্নে সাজিয়ে রেখে মানুষের কাছে দ্রষ্টব্য বানিয়ে রেখেছেন – তাতে অনেকেই যেমন বিস্ময় প্রকাশ করেন, তেমনই অনেকে সন্দেহও প্রকাশ করেন। ভাইপোর ৭ কোটির বাংলো হয়ে গেল, অথচ মুখ্যমন্ত্রী টালির ঘরেই রয়ে গেলেন – এনিয়ে বিরোধীরা নিন্দা-মন্দও করেন। বিরোধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে নিত্যনতুন হাওয়াই চটি আর পাটভাঙা নীল-সাদা শাড়ি নিয়ে কটাক্ষ করে এটাও বলেন, এত বেতন, পেনসন যখন তিনি নেন না তখন সেই টাকা যায় কোথায়? এই টাকা দিয়ে গরীব মানুষের জন্য বিশেষ তহবিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ কোনও তহবিল গড়েছেন – এমন খবরও পাওয়া যায় না। তাহলে সেই টাকা কি তিনি তাঁর পার্টির ফান্ডে দেন?

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছাকৃতভাবেই এই কাজটা করছেন। কারণ একসময় এই টালির ঘরের ছাদ, পায়ে হাওয়াই চটি দেখেই বাংলার মানুষ তাঁর ওপর ভরসা করেছিল। বিশ্বাস করেছিল। সততার প্রতীক বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ধুয়ো তুলেছিলেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দুর্নীতির অভিযোগ আর সিবিআই-ইডির তদন্তের ঠ্যালায় সেসব আর কেউ বলেন না। এই পরিস্থিতিতে নিজের ইমেজ ফিরে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন মমতা। তারই ফলস্বরূপ এদিন নিজের বেতন বৃদ্ধি থেকে পিছু হঠলেন মমতা।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -