Homeবৈঠক২৪ নয়, ২৬ সালেই বাংলায় কুর্সি বদলের নিদান দিলেন অমিত শাহ

২৪ নয়, ২৬ সালেই বাংলায় কুর্সি বদলের নিদান দিলেন অমিত শাহ

- Advertisement -

তথাগত সিংহ

শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা ধুয়ো তুলেছিলেন, ২৪সালেই কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। বাংলায় বদল হতে পারে। এমনকী খোদ অমিত শাহও এর আগে বীরভূমের সভায় এসে বলে গিয়েছিলেন, ২৪ সালেই মমতা সরকার বাংলা থেকে ফুররর হয়ে যাবে। কিন্তু সেই কথার ৩ মাস কাটতে না কাটতেই সুর বদল করে ফেললেন তিনি। বুধবার ধর্মতলার সভায় হাজির হয়ে জানালেন, ২৪ নয়, ২০২৬ সালেই বাংলায় পরিবর্তন আসবে। বিজেপির কর্মী সমর্থকরা তাদের ‘অত্যাচারে’র বদলা নেবেন। তার আগে অবশ্য সেই বদলার ‘নিম্ব’ রাখতে হবে। ২০২৪ সালে বাংলায় বিজেপিকে ৩৫টির বেশি আসনে জয়ী হতে হবে। যাতে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে খোদ নরেন্দ্র মোদী বলতে পারেন – বাংলার জন্যই তিনি এবার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন।

সন্দেহ নেই অমিত শাহর নতুন এই ‘ডেডলাইনে’ ২৪ সালেই ‘পরিবর্তনে’র জন্য মুখিয়ে থাকা বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা কিছুটা ধাক্কা খাবেন। যেমনটা তারা ইদানিং ধাক্কা খেয়েছেন বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্তে ‘মাথাদের’ জেলে না ঢুকতে দেখে। তবে অমিত শাহর এদিনের বক্তব্যের মধ্যে যে কোনও লুকোছাপা নেই – সেটা অবশ্য বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা স্বীকার করছেন। ২৪ সালে তৃণমূলের সরকারের পতন ঘটবে – এমন লক্ষণ নেই বললেই চলে। তা সে যতই সরকারের ওপর দুর্নীতির মেঘ বজ্রপাত করুক না কেন। বরং উলটে দেখা যাচ্ছে বিজেপি বিধায়কদের তলে তলে এখনও ভাঙিয়ে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। হাজার ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের পরেও সেই ধস ঠেকানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় মধ্যবর্তী নির্বাচন কার্যত অসম্ভব বলেই ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। সেই কথাটাই এদিন যেন ধর্মতলার মঞ্চ থেকে খোলাখুলিভাবে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের জানিয়ে দিলেন অমিত শাহ।

তবে এদিন তিনি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের যে একেবারেই নিরাশ করেছেন, এমনটাও কিন্তু নয়। এতদিন যে কথাটা শুভেন্দু-সুকান্ত-দিলীপরা লাগাতার মিডিয়ার ক্যামেরায় বলে এসেছেন, এদিন ধর্মতলার সভা থেকে সেই কথাগুলিরই যেন পুনরাবৃত্তি করেছেন অমিত শাহ। দুর্নীতির ইস্যুর কথা যেমন তিনি তুলেছেন, তেমনই দুর্নীতিতে ভাইপোর নাম যে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে – সেটাও কটাক্ষ করে বলেছেন। সেই সঙ্গে এদিন বাংলার বঞ্চনা নিয়েও জবাব দিতে দেখা গিয়েছে অমিত শাহকে। হিসেব দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে ১০ বছরে মোটে ২ লাখ কোটি টাকা পেয়েছিল। এবং মোদী সরকারের মোটে ৯ বছরেই সেটা বেড়ে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। সিএএ নিয়েও বঙ্গ বিজেপি নেতাদের ধোঁয়াশা রয়েছে। মমতা সরকারের আমলে বাংলায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার আদৌ সিএএ কার্যকর করবে কি না – সেনিয়ে ধোঁয়াশা দূর করতে অমিত শাহ বলেন, ‘‘বাংলায় সিএএ অবশ্যই হবে। কিন্তু তার আগে দিদির সরকারকে পালটাতে হবে।’ অর্থাৎ তৃণমূলকে বাংলার কুর্সি থেকে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত যে বিজেপির অনেক স্বপ্নই এ রাজ্যে অপূরণ থাকবে – সেকথা এদিন খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ।

অথচ, এদিন বঙ্গ বিজেপির নেতারা অমিত শাহ কী বলেন – সে নিয়ে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে এমনটাও দাবি করা হচ্ছিল, ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত যাতে দ্রুত দুর্নীতির মাথাদের কাছে পৌঁছে যায় তার একটা ইঙ্গিত অমিত শাহ দেবেন। কিন্তু এদিন অমিত শাহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেই নিজেকে ধর্মতলায় তুলে ধরলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে কোনও মন্তব্য করতে দেখা গেল না। মমতা সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথা বললেন বটে, কিন্তু সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কোনও ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করলেন না। বরং গোটা ভাষণেই তিনি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের বুঝিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গে নিয়ম মেনেই মমতা সরকারের কুর্সি কাড়তে হবে। এবং সেটার জন্য যা লড়াই তা রাজ্য বিজেপির নেতা এবং কর্মীদেরই লড়তে হবে। কেন্দ্রের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না।

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -