HomeবৈঠকAbhishek: তৃণমূল দলটাকেই বাঘের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

Abhishek: তৃণমূল দলটাকেই বাঘের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

- Advertisement -

তুষার খাসনবিশ

তৃণমূলে মমতা বনাম অভিষেকের যে একটা লড়াই চলছে, সেটা তৃণমূলের অন্য নেতা-কর্মীরা মানতে চান না। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু সমালোচকও যখন এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন বলতেই হয় – রাজনীতিতে ব্যাটা তার বাপকেও ছাড়ে না। রাজনীতি তো দূর, আমাদের সামাজিক জীবনেই বাপের একটু বেশি সম্পত্তি থাকলে ছেলে তা হাতে পাওয়ার জন্য খুন-খারাপি পর্যন্ত করতে চলে যায়। আর এ তো একটি রাজ্যের ক্ষমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে রাজা হওয়ার সুযোগ। রাজা আর রাজত্বর লোভ এড়ানো অত সহজ নয়। বরং এই রাজত্ব কিংবা সিংহাসন কবে হাতে আসবে সে নিয়ে পুরাণ-ইতিহাসে একাধিকবার বাপকে ছেলের রাস্তা থেকে সরানোর অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে।

এবিষয়ে সন্দেহ নেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে তৃণমূলের কারও যদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীত্বের কুর্সিতে অধিকার থেকে থাকে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলতে গেলে ফাঁকা মাঠে অভিষেক খেলছেন। যে ক‘জন তাতে আপত্তি জানাতে পারতেন তাঁরা হয় অন্যদলে চলে গিয়েছেন, নতুবা খোদ মমতাই তাঁদের সাইড লাইনে ঠ্যালে দিয়েছেন। কিন্তু অভিষেকের সামনে মুশকিলটা হয়েছে সময় নিয়ে।

তৃণমূল যখন ২০১১ সালে প্রথমবার বাংলার ক্ষমতায় এসেছিল, সেই সময় তৃণমূলের নেতারা গর্ব করে একটা কথা বলতেন – আগামী ৩৫ থেকে ৪০ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে কেউ সরাতে পারবে না। কথাটার মধ্যে যতটা না সত্যি ছিল, তার থেকেও বেশি ছিল আবেগ। মমতাকে ঘিরে শুধু তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেই সেই আবেগের ঝড় উথলে পড়েনি, ৩৪ বছর বাম শাসনে শিরদাঁড়া নুঁইয়ে পড়া গোটা বাঙালি সমাজই ভেবেছিল – কেউ বাংলাকে নিজের পায়ে খাড়া করতে পারেন তিনি জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু ১৩ বছর কাটতে না কাটতেই সেই আবেগ কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছে। বাংলার মানুষকে নতুন করে একটা হতাশা ঘিরে ধরেছে। তৃণমূল কর্মী সমর্থকরাও কেমন যেন দিন কে দিন ঝিমিয়ে পড়ছেন। এর কারণ যেমন একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ, ঠিক তেমনই ভারতের আর পাঁচটা রাজ্যের এগিয়ে যাওটাও কিন্তু রয়েছে। আজকের দিনের মানুষ কিন্তু আর খবরের কাগজ পড়ে রিপোর্ট দেখেন না। সোশাল মিডিয়া মেইনস্ট্রিম মিডিয়া হয়ে ওঠাতে এখন সব প্রান্তের মানুষই সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন, বুঝতে পারছেন। সত্যি মিথ্যাটা নিজেই যাচাই করে নিতে পারছেন। কোনও তলপিবাহক সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টারের লেখা পড়ে কিন্তু চোখবন্ধ করে কিছু বিশ্বাস করতে হচ্ছে না।

এই অবস্থায় যখন তৃণমূল নেত্রী কিংবা নেতারা যখন এগিয়ে বাংলার গুণগান গাইছেন, একের পর এক দাবি করছেন, মানুষ কিন্তু সেগুলি সত্যি কি মিথ্যা – ঠিক খতিয়ে দেখছেন। আর যতই নেতা-নেত্রীদের দাবির সঙ্গে বাস্তবের অমিলটা ফারাকটা বড় হচ্ছে ততই দুর্নীতির ভুত কিন্তু শাসকদলের ওপর চেপে বসছে। মন্ত্রী দাবি করলেন এত কোটি টাকার কাজ হয়েছে, কিন্তু যখন বাস্তবে সেই কাজের কিছুই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না তখন কিন্তু মানুষ ধরে নিচ্ছেন – এই টাকাও ঝেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ঠিক এই সময়েই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা রণকৌশল নিলেন। তিনি নিজে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে এগিয়ে দিলেন। মানুষের অভাব অভিযোগ শোনা থেকে শুরু করে দলের সংগঠন – সবই ভাইপোর হাতে ছেড়ে দিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ৩৪ বছর অবহেলায় থাকা বাংলার মানুষের প্রত্যাশা অনুসারে উন্নয়নের কাজ করতেন তাহলে অভিষেককে নেতা হিসেবে মেনে নিতে কারও কোনও অসুবিধা হত না। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উলটো। কিন্তু বাংলার মানুষ তো বটেই তৃণমূলের নেতা কর্মীদের একাংশ পর্যন্ত অভিষেককে মমতার সঙ্গে তুলনা করতে চাইছেন না।

এই পরিস্থিতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করতে চেয়েছেন। কেন্দ্রের বকেয়া টাকা দিল্লিতে চাইতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করতে বকেয়া টাকার দায় তৃণমূলের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে শুরু করে বার্ধক্যভাতা সবই তৃণমূল নিজের পকেট থেকে দেবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক অপরিপক্কতার কারণেই হোক কিংবা মোদীর বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া না নোয়ানোর জেদ – অভিষেক কিন্তু কুড়ুলটা মেরেছেন নিজের পায়েই। মানে তৃণমূলের ওপরেই।

দলের এমন রণকৌশল দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ঝানু রাজনৈতিক নেত্রী কিন্তু চুপ থাকেন নি। যথারীতি অভিষেককে থামিয়ে দিয়ে তিনি এগিয়ে এসেছেন। নিজের হাতে ব্যাট ধরেছেন। কেন্দ্রের বকেয়া টাকা যে কেন্দ্রের কাছ থেকেই লড়াই করে আদায় করতে হবে – সেটাও বলেছেন। ‘টাকা না দিলে কিছু যায় আসে না’ – একথা পাবলিককে বলা যত সহজ, সরকার চালাতে গেলে যে ততটাই কঠিন – সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতএব তিনি লড়াইয়ে একটু ঢিলে দিতে চান।

অন্যদিকে অভিষেককে কিন্তু থামানো যাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দলের পরবর্তী রণকৌশল গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই অভিষেককে দেখা গিয়েছে আগ বাড়িয়ে নিজের লোকসভা এলাকার কিছু কর্মী-সমর্থকদের বকেয়া ১০০ দিনের টাকা নিজের পকেট থেকে মিটিয়ে দিতে। এতে অভিষেকের লোকসভার কর্মী-সমর্থকরা খুশি হবেন – সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্য তৃণমূল সাংসদের কী হবে? তাঁরা কোথা থেকে এই টাকা দেবেন? তাঁদের টাকাটা কি তৃণমূল দেবে? দল দেবে?

যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেকের মতো করে সব তৃণমূল সাংসদদের নিজের নিজের এলাকায় ১০০দিনের কাজের টাকা মিটিয়ে দিতে বলেন, সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে বিক্ষোভ হবে। বিজেপির দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আর যদি তৃণমূলের পার্টিফান্ড থেকে সেই টাকা দেওয়া হয় তাহলে দলের ভাঁড়ারে টান পড়বে। এমনিতেই ইডি-সিবিআইয়ের চক্করে তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের সব হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে। এখন যদি অভিষেকের জেদ মেনে মমতা টাকা মেটাতে শুরু করেন তাহলে তৃণমূল পার্টিটাই বিক্রি হয়ে যাবে। যে টাকা রাজ্য সরকার মেটাতে পারছে না, সেটা তৃণমূল মেটাবে কী করে? আর কেনই বা মেটাবে?

কিন্তু কে শোনে কার কথা! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন তাঁর মতো করে। ডায়মন্ড হারবারের কিছু কর্মী-সমর্থকের ১০০ দিনের কিছু বকেয়া টাকা নিজের পকেট থেকে মিটিয়ে দিয়ে কথা রেখেছেন ঠিকই কিন্তু তৃণমূলকে তো বাঘের পিঠে বসিয়ে দিয়েছেন। এখন তৃণমূল না পারবে সবাইকে সব টাকা মিটিয়ে দিতে, না পারবে এই টাকা দেওয়ার দায় এড়াতে। বিরোধীরা এরই মধ্যে অভিষেকের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এরপর তৃণমূলের পিছনে তো এ নিয়েও সিবিআই-ইডি পিছনে পড়ে যাবে। এটা কী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারছেন না।

(লেখকের বক্তব্য একান্তই লেখকের নিজস্ব)

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -