অরণ্য রায়
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চালটা বেশ দিয়েছেন, সন্দেহ নেই। দিল্লিতে মোদী বিরোধী জোটের প্রথম ‘কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ বা সমন্বয় কমিটির বৈঠকে না গিয়ে তিনি হাজির হলেন সিজিও কমপ্লেক্সে। ইডির ডাকে সাড়া দিতে। ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদেরও বলিহারি! তাঁরা অভিষেককে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকলেন তো ডাকলেন সেই ১৩ তারিখে। সেপ্টেম্বরের যে ১৩ তারিখে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমন্বয় কমিটির দিল্লিতে বৈঠক। স্বাভাবিকভাবেই অভিষেক জমিয়ে খেলার সুযোগ পেলেন। এবং ছক্কাটাও দিব্যি কষালেন।
অভিষেকের এমন ছক্কাকে দিল্লি থেকে সমর্থন করলেন উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নাম্বার টু নেতা সঞ্জয় রাউত। কিছুদিন আগে এই সঞ্জয় রাউতকেই চ্যাঙদোলা করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু জেলে আটকে রাখতে পারেনি। সুতরাং অভিষেককে ইডির ডাকে সবথেকে বেশি জ্বালাটা ধরেছে সেই সঞ্জয় রাউতেরই। দিল্লি থেকে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘‘অভিষেককে যেভাবে ইডি সমন্বয় কমিটির বৈঠকে আসতে বাধা দিল, তার প্রতিবাদে চেয়ার খালি রেখে প্রতিবাদ করা হবে।’’ অভিষেক এটাই হয়তো চেয়েছিলেন। সেই কারণেই হয়তো দিল্লিতে শরদ পাওয়ারের বাড়ির বদলে কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে দিনটা কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর যাই হোক, নজরে তো পড়া যাবে!
কিন্তু অভিষেক কিংবা তৃণমূল যত নজরে পড়বে অন্য আরেক জনের মনের কষ্ট ততই বাড়বে। আর তাঁর নাম হচ্ছে অধীররঞ্জন চৌধুরী। পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সনিয়া-রাহুলরা মোদী বিরোধিতা করতে গিয়ে মমতার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু জাঁতাকলে পড়েছেন অধীর। পশ্চিমবঙ্গে ইদানিং যাও একটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, সনিয়া-রাহুলদের রণকৌশলে সেটাও জলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এদিনের এই সমন্বয় কমিটির বৈঠকে সঞ্জয় রাউতের চেয়ার ফাঁকা রাখার মন্তব্যের জবাব দিতে অধীর বলেছেন, ‘সব চোরেরাই ধরা পড়ুক’।
প্রশ্ন হচ্ছে, অধীরের এমন মন্তব্যে কি মোদী বিরোধী জোটে ফাটল তৈরি করছে? উত্তর হল, মোটেও না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর চৌধুরি যা বলেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারত। কিন্তু যেভাবে অধীরকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে দিয়ে সনিয়া-রাহুলরা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছেন – তাতে অধীরের মতো নেতা কী বললেন না বললেন তাতে গান্ধী পরিবারের কিছু যায় আসেনা। আর অধীরের এমন ‘সব চোর ধরার’ কথা মুখ দিয়ে বেরোবে না কেন? সনিয়া-রাহুলরা তো আর পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জ্বালাটা তো বুঝছেন না।
অতএব, অধীর যতই হা হুতাশ করে চোর ধরার অভিশাপ দিতে থাকুন না কেন, তাতে অভিষেক তো দূরের কথা, কাকও ধরা পড়বে না। রইল গিয়ে মোদী বিরোধী জোটে অভিষেকের অনুপস্থিতি। এই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মূল মন্ত্রই হল, সিবিআই-ইডির হানা থেকে বাঁচার রাস্তা বের করা। প্রায় সবদলই এই ইডি-সিবিআইয়ের হানার ভয়েই এক টেবিলে জড়ো হয়েছে। এর মধ্যে সনিয়া-রাহুলের নামও রয়েছে। এই দু‘জনকেও ইডি ছেড়ে কথা বলেনি। ন্যাশনাল হেরল্ড আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ফলে অধীর তো ইডি-সিবিআইয়ের ডাক পাননি, সুতরাং তিনি এই জ্বালা বুঝবেন কী করে!